দোরগোড়ায় লোকসভা ভোট। আর এদিকে রাফাল নিয়ে রাজনৈতিক ডামাডোল তুঙ্গে। গত বছর থেকেই কংগ্রেস-সহ দেশের সব বিরোধীরাই এই অভিযোগ এনেছে যে, ‘চৌকিদারই চোর হ্যায়’। আর তাতেই নয়া মাত্রা যোগ করেছে ‘দ্য হিন্দু’।
এক্তিয়ার না থাকলেও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের নিয়োগ করা প্রতিনিধিদলকে এড়িয়ে, রাফাল যুদ্ধবিমান নিয়ে সমান্তরাল সওদা করেছিল প্রধানমন্ত্রীর দফতর। পিএমও-র অতি আগ্রহেই ফরাসি সরকারের ‘সভরেইন গ্যারান্টি’ বা ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি ছাড়াই রাফাল চুক্তি পাকা হয়েছিল। এবং তা প্রতিরক্ষা প্রতিনিধিদলের তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও। ‘দ্য হিন্দু’ কাগজে বুধবার প্রকাশিত হয়েছে এই রিপােটটি।
সেখানে আরও জানান হয়েছে যে, গ্যারান্টি না থাকায় প্রতিটি যুদ্ধবিমানের দাম যে বেড়ে যাচ্ছে, চুক্তি সই হওয়ার আগেই সে ব্যাপারে সচেতন করা হয়েছিল সরকারকে। বলা হয়েছিল, ইউপিএ আমলে যা দাম ঠিক হয়েছিল, তার থেকে ২৪.৬১ কোটি ইউরাে বেশি দিতে হচ্ছে ৩৬টি বিমান ও অস্ত্রশস্ত্রের প্যাকেজের জন্য। ৭ সদস্যের প্রতিনিধি দলের ওই চুড়ান্ত রিপাের্টটি ২১ জুলাই ২০১৬ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে জমা পড়ে। আর দু’দেশের সরকারের মধ্যে ৭৮৭ কোটি ইউরোর চুক্তিটি সই হয় ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬।
বিমান এবং অস্ত্রশস্ত্র ভারতকে সময়মত সরবরাহ করার নিশ্চয়তা হিসেবে ৫৭.৪ কোটি ইউরোর সভরেইন বা ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি দিতে হত। কিন্তু তা যে দিতে হবে না, সেই বোঝাপড়া ফরাসি সরকারের সঙ্গে পিএমও-র হয়ে যায়। ফলে, আর্থিক দায় এড়িয়ে যায় রাফালের নির্মাতা সংস্থা ‘দাসো অ্যাভিয়েশন’।
ভারতীয় প্রতিনিধিরা তাঁদের রিপোর্টে বুঝিয়েছেন, কীভাবে দাম বাড়ল রাফাল যুদ্ধ বিমানের। তুমুল দর কষাকষির জোরে ১.৫ কোটি ইউরোর আবশ্যিক অতিরিক্ত খরচ বাদ দিয়ে ৭৮৭.৮ কোটি ইউরোর চূড়ান্ত অফার ছিল প্রস্তাবিত ৮২০.৫৮ কোটি ইউরোর থেকে ৩২.৭৮ কোটি ইউরো কম। বিমান এবং অস্ত্র দুটি খাতেই কমানো সম্ভব হয়েছিল। এর থেকে ৫৭.৪ কোটি ইউরো ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি বাদ হলে আরও কিছুটা সাশ্রয় হতো সরকারের। কিন্তু দাসোর সেই আর্থিক দায় মকুব করে দেওয়ায় উলটে ২৪.৬১ কোটি ইউরোর বাড়তি খরচ ঘাড়ে চেপে বসল।
অথচ ভারতের আইন ও বিচার মন্ত্রক ব্যাঙ্ক গ্যারান্টির
ওপর জোর দিয়েছিল, যেহেতু বরাত দেওয়া যুদ্ধ বিমান এবং অস্ত্র সরবরাহ হওয়ার অনেক আগেই বড় অঙ্কের টাকা আগাম দিতে হচ্ছে। প্রতিরক্ষা দফতরের প্রতিনিধি দলও ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি দাবি করেছিল। দাসো শুরুতে যে দরপত্র দিয়েছিল, তাতে ব্যাঙ্ক গ্যারান্টির বিষয়টি রেখেছিল, যে কোন আন্তর্জাতিক চুক্তিতেই যা আবশ্যিক। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর দফতরের হস্তক্ষেপ এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে প্যারিসে বৈঠক করার পর দাসো কর্তারা ব্যাঙ্ক গ্যারান্টির প্রশ্নে বেঁকে বসেন। ভারতীয় প্রতিনিধিদের চেষ্টাতেও কাজ হয়নি।
এর আগেই দ্য হিন্দু ওই প্রতিরক্ষা প্রতিনিধিদের একটি আগের রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল, যাতে জানানো হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রীর দফতর ফ্রান্সের সঙ্গে সমান্তরাল সমঝোতা চালানোর কারণে ভারতের অবস্থান ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে। এই অযাচিত, এক্তিয়ার-বহির্ভূত হস্তক্ষেপ বন্ধ হওয়া জরুরি। তৎকালীন প্রতিরক্ষা সচিব জি মোহনকুমার এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত হন। আর সর্বশেষ রিপোর্টটিতে তো পরিষ্কার, রাফাল কেনার দ্বিতীয় চুক্তিতে জনগণের অর্থ অপচয়ের বিষয় গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ফলে বিরোধীদের ‘চৌকিদারই চোর হ্যায়’ দাবিটিকে এখন আর ভ্রান্ত বলে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।