মাটিতে পড়ে মৃত জয়(অমিতাভ)-এর দেহ। তাঁর হাত থেকে পড়ে যাওয়া কয়েনটি নজরে পড়তেই বীরু(ধর্মেন্দ্র) দেখে যে সেটির দু’দিকেই হেড। এরপরই মুখ চোখ বদলে যায় বীরুর। রাগে ফেটে পড়ে সে চিল্লিয়ে ওঠে – ‘কুত্তে! ম্যায় তেরা খুন পি জাউঙ্গা! চুন চুন কে মারুঙ্গা!’ দৃশ্যটি ‘শোলে’ ছবির। আর সংলাপটিও বিপুল জনপ্রিয়। এখনও যা মানুষের মুখে মুখে ঘোরে। ধর্মেন্দ্রর অ্যাংরি ইমেজের সমার্থক হয়ে ওঠা এই সংলাপই সম্প্রতি শোনা গেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণে। যা প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদার সঙ্গে মোটেই মানানসই নয়। এমন হম্বিতম্বি তাঁর সাজে না বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বালাকোটে ঢুকে জঙ্গী ঘাঁটি ধ্বংস করেছে ভারতীয় বায়ুসেনা। কিন্তু তারপর সেনার তরফে মৃত জঙ্গীর সংখ্যা না জানান হলেও সরকার আগ বাড়িয়ে বলে দেয়, সেই অভিযানে নিকেশ হয়েছে ৩৫০ জঙ্গী। যে দাবিকে নস্যাৎ করে দিয়েছে বিশ্বের প্রথমসারির সংবাদ মাধ্যমগুলি। অবিশ্বাস বিরোধীশিবিরেও। এরপর থেকেই বেকায়দায় মোদী সরকার। তাই এমতাবস্থায় যুদ্ধের জিগির জিইয়ে রাখতে আমেদাবাদের এক সভায় মোদী পাকিস্তানকে শিক্ষা দিতে ওদের ঘরে ঘরে ঢুকে মারার নিদান দিলেন! যা নিয়ে তোলপাড় টুইটার।
সাংবাদিক, লেখিকা সাগরিকা ঘোষ টুইট করে বলেন, ‘আমেদাবাদের এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, হম ঘর মে ঘুস ঘুস কর মারেঙ্গে! প্রধানমন্ত্রী স্যর, আপনি কি বোঝেন ভারত এবং পাকিস্তান দুজনেই পরমাণু শক্তিধর দেশ? স্রেফ নির্বাচনে জিততে আগুন নিয়ে খেলা হয়ে যাচ্ছে না!’ তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় সাগরিকার টুইটের জবাব দিতে কোনও বিজেপি নেতা নয়, আসরে নামেন খোদ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। তিনি পাল্টা টুইট করে বলেন, ‘তাতে আপনার এত গা জ্বালা করছে কেন? উনি তো সন্ত্রাসবাদীদের ঘরে ঘরে ঢুকে মারার কথা বলেছেন। ওরা মারলে ঠিক আছে! আমরা মারলে আপনাদের যত দুঃখ!’
আবার প্রধানমন্ত্রীর একটি টুইট রি-টুইট করেন সাংবাদিক পায়েল মেহতা। যাতে লেখা, ‘আমি বেশি অপেক্ষা করি না। বেছে বেছে হিসেব চোকানো আমার অভ্যাস। এখন ঘরে ঘরে ঢুকে মারব। ৪০ বছর ধরে সন্ত্রাসবাদ দেশের বুক গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিয়েছে। কিন্তু ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতিতে মত্ত লোকেরা পদক্ষেপ করতে ভয় পেয়েছে।’
অন্যদিকে, পাক অধিকৃত কাশ্মীরে বায়ুসেনার বিমান হামলাকে কেন্দ্র করে দেশ জুড়ে জাতীয়তাবাদের ঝড়। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পুরোদস্তুর তৈরি প্রধানমন্ত্রী। জাতীয়তাবাদকেই মূলধন করে প্রচারের কৌশল তৈরি হচ্ছে। আবার বিজেপির স্লোগানও তৈরি হয়ে গেছে। যেটি আপাদমস্তক মোদী কেন্দ্রিক— ‘মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়’। অর্থাৎ, মোদী থাকলেই সম্ভব। সূত্রের খবর, প্রথম লাইনটি এক রেখে একটি প্রচারমূলক গানও লিখেছেন গীতিকার প্রসূন যোশি।