ফেল করেছে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের কঠোর নীতি। এর ফলে উপত্যকায় এখন সবদিক থেকেই ব্যর্থ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু সামনেই লোকসভা নির্বাচন। আর কে না জানে ভোট বড় বালাই। তাই নিজেদের মুখরক্ষা করতে এবার কাশ্মীর নিয়ে প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর দেখানো পথেই পা বাড়াতে চলেছে মোদী সরকার।
বিজেপি সরকারের আমলে কাশ্মীর সমস্যা আরও জটিল হয়ে উঠেছে বলেই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। এর জন্য কেন্দ্র সরকারের কাশ্মীর নিয়ে ‘কঠিন’ অবস্থানকেই দায়ী করছেন তাঁরা। অথচ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে জওহরলাল নেহরুর পরে বাজপেয়ীই কাশ্মীর নিয়ে সব থেকে ভাল কাজ করেছেন। এবং এজন্য তিনি সব মহলে প্রশংসিতও হন। কাশ্মীর নিয়ে ‘হিলিং টাচ’-এর নীতি গ্রহণ করেছিলেন বাজপেয়ী।
কিন্তু মোদী সরকারের আমলে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের দেখানাে কঠিন নীতি, যা রাজনৈতিক মহলে ‘ডোভাল ডকট্রিন’ বলেই পরিচিত, সেই রাস্তা অবলম্বন করা হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি পুলওয়ামার জঙ্গী হামলা ও তারপরের কয়েকদিনে সেখানকার পরিস্থিতি দেখে তড়িঘড়ি শাসক দল তাদের পুরনো লাইনে ফেরার চিন্তা ভাবনা করছে। ইতিমধ্যেই তা নিয়ে পদক্ষেপ করাও শুরু হয়েছে।
প্রসঙ্গত, প্রায়শই সেনার হাতে কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের হেনস্তা বা হয়রানির শিকার হওয়ায় অভিযোগ ওঠে। জানা গেছে, এবার থেকে সেনা নিয়ে কাশ্মীরিদের মধ্যে যাতে কোনো বিরূপ মনোভাব তৈরি না হয়, ইতিমধ্যেই সেই নির্দেশ সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। ভোটের আগে নতুন করে যাতে সাধারণ কাশ্মীরিদের কোনও রকম হয়রানির শিকার না হতে হয়, সেদিকেও কেন্দ্রের তরফ থেকে নজর নেওয়া হচ্ছে।
বাজপেয়ী কাশ্মীরের জন্য তিনটি মন্ত্রের কথা বলতেন, ‘ইনসানিয়ত, জামুরিয়ত ও কাশ্মীরিয়ত।’ এর অর্থ মানবতা, গণতন্ত্র এবং কাশ্মীরি মূল্যবোধ। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে কাশ্মীর সফরে শ্রীনগরে একটি জনসভায় এই তিনটি প্রতিশ্রুতি কাশ্মীরিদের দিয়েছিলেন তিনি। এবং পরে সংসদেও একই কথা বলেছিলেন। লোকসভায় সেসময় তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা যদি ইনসানিয়ত, জামুরিয়ত ও কাশ্মীরিয়ত এই তিন মন্ত্র মেনে এগোতে থাকি তাহলে সমস্যার সমাধান সম্ভব।’
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক কালে জঙ্গী নেতা বুরহান ওয়ানির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উপত্যকা অশান্ত হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। আর তাতে কেন্দ্র সরকার আরও শক্ত অবস্থান নিয়েছে। ছড়রা গুলির আঘাতে দৃষ্টি হারিয়েছে শয়ে শয়ে ক্ষুব্ধ কাশ্মীরি কিশোর থেকে তরুণ। কিন্তু এবার কেন্দ্র আর সেই কঠোর নীতির রাস্তা একেবারেই হাঁটতে চাইছে না। এই মুহূর্তে কাশ্মীর সমস্যা আরও জটিল হয়ে দাঁড়াক আর তা কোনও ভাবেই চায় না মোদী সরকার। কারণ একটাই, সামনেই লোকসভা নির্বাচন। আর কে না জানে, ভোট বড় বালাই।