দেশে ‘আচ্ছে দিন’ আনবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। তবে তাঁর শাসনকালের ৫ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর দেখা গেল তা আসলে ‘জুমলা’ ছিল। এর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশবাসীকে এই স্বপ্নও দেখিয়েছিলেন যে, কারখানা ভিত্তিক উৎপাদন বা ম্যানুফেকচারিং দিক দিয়ে প্রবল শক্তিধর হতে চলেছে ভারত। এ জন্য ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ নামের একটি উদ্যোগও শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু অবশেষে দেখা গেল তাও আসলে এক জুমলাই ছিল। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র মানে আদতে ‘মেড ইন চায়না’ই। যার বড় উদাহরণ হল, সদ্য চীনের ডালিয়ান থেকে কলকাতায় এসে পৌঁছন মেট্রোর রেকগুলি।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি ডালিয়ান থেকে রওনা দিয়েছিল হংকংয়ের জাহাজ এমভি হান ঝ্যাং। সাংহাই-সিঙ্গাপুর-চট্টগ্রাম হয়ে ২৭ দিনে ৩,৬৩৮ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে রবিবার সন্ধ্যায় কলকাতা বন্দরে নোঙর ফেলেছে সেটি। প্রায় ১২ হাজার বর্গফুটের ধাতব পাত দিয়ে ঢেকে রাখা ‘হ্যাচ কভারের’ নীচে জাহাজের পেটের মধ্যে এসে পৌঁছেছে মেট্রোর আটটি কোচ এবং যন্ত্রাংশ মিলিয়ে মোট ৫০টি বাক্স। রবিবার রাত ১২টার কিছু আগে জাহাজ থেকে ট্রেলারে নামানো হয় প্রথম রেকটি। প্রতিটি রেককে জাহাজ থেকে ট্রেলারে নামাতে গড়ে ২ ঘণ্টা করে সময় লেগেছে বলে খবর। সোমবার দুপুরের দিকে শেষ হয় রেক নামানোর কাজ।
কলকাতা বন্দরের চেয়ারম্যান বিনীত কুমার জানান, বছর আটেক আগে চীনের ডালিয়ান সংস্থা থেকেই দিল্লী মেট্রোর জন্য রেক এসেছিল। ওই রেক সে বার কলকাতা থেকে সড়কপথে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল দিল্লী। কিন্তু কথা হল, সে তো আট বছর আগের কথা। তখন তো আর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ ছিল না। কিন্তু ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ শুরুর পরও কেন মোদী সরকারের রেল মন্ত্রককে চীনের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে? প্রশ্ন উঠছেই। তবে কি ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ মানে আসলে বিদেশ থেকেই যন্ত্রাংশ বা যাবতীয় সামগ্রী আমদানী করে এনে তা ভারতে চালানো? উঠছে এ প্রশ্নও। শুধু তাই নয়, বিরোধীদের কটাক্ষ তো রয়েছেই। পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়াতেও উড়ে আসছে নেটিজেনদের তরফে একের পর এক ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য।
তবে এরপরও মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, নতুন রেকটি পরীক্ষার পরে ইতিবাচক ফলাফল মিললে মে মাস থেকে প্রতি মাসে চীন থেকে একটি করে রেক আসবে! চীন থেকে মোট ১৪টি রেক আসার কথা! অর্থাৎ মোদী মুখে যাই বলুক না কেন, যতই মেক ইন ইন্ডিয়ার জুমলা দিন না কেন, আসলে তাঁর জমানাতে দেশের নয়, চীনের মতো দেশগুলিরই ‘আচ্ছে দিন’ এসেছে।