রাজ্যে ক্ষমতায় এসেই বাংলাকে খোলনলচে বদলে ফেলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর উন্নয়নের ছোঁয়ায় শিল্প, কৃষি, পর্যটন সব দিক থেকেই এখন এগিয়ে বাংলা। তাই রাফাল দুর্নীতি কিংবা সার্জিকাল স্ট্রাইক নিয়ে তরজা নয়, আসন্ন লোকসভা ভোটে বিজেপির মোকাবিলায় মমতা সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচি, সামাজিক প্রকল্পেই সর্বাধিক ভরসা রাখছে তৃণমূল। দলীয় ইস্তেহারেও রাজনৈতিক ইস্যুর থেকেও প্রাধান্য পাবে রাজ্যের উন্নয়ন।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে জানা যাচ্ছে, ভোট ঘোষণার পর পরই তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হবে। সেই সঙ্গে ইস্তেহারও। বিরোধীরা ময়দানে নামার আগেই পুরোদস্তুর প্রচারে নেমে পড়বে রাজ্যের শাসকদল। এভাবে শুরুতেই বিরোধীদের ঝটকা দিতে চাইছেন তৃণমূল নেত্রী। প্রার্থী বাছাইয়ে মুখ্যমন্ত্রী ১২ জনের কমিটি গড়ে দিলেও সেই কাজটা তিনি নিজেই অনেকটা এগিয়ে রেখেছেন।
প্রসঙ্গত, এ বারই প্রথম দিল্লীকে পাখির চোখ করে লোকসভা ভোটের লড়াইয়ে নামছে তৃণমূল। প্রচারেও সেই বিষয়টি আসবে বলেই মনে করা হচ্ছে। কেন্দ্রে সরকার বদলের ডাক দেওয়ার পাশাপাশি নতুন সরকার গঠনে মমতার হাত শক্ত করতে রাজ্যের ৪২টি আসনেই তৃণমূল প্রার্থীদের জিতিয়ে আনার জন্য রাজ্যবাসীর কাছে আহ্বান জানানো হবে। রাজ্যের ভোটারদের মন জয়ে তৃণমূল আস্থা রাখছে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পেই। তার সঙ্গে নোট বাতিল, রাফাল দুর্নীতি, জিএসটি, ব্যাঙ্ক ঋণ খেলাপির মতো জাতীয় ইস্যুও জায়গা পাবে ইস্তেহারে।
লোকসভা ভোটের রণনীতি ঠিক করতে দিন কয়েক আগেই দলের কয়েক জন প্রথম সারির নেতার সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে তিনি জানান, প্রচারে মোদী সরকারের ব্যর্থতার দিকগুলি যেমন তুলে ধরতে হবে, তেমনই রাজ্য সরকার মানুষকে যে সব পরিষেবা দিচ্ছে, সেগুলিও ভালো করে প্রচার করতে হবে। কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি প্রচারে জোর দিতে হবে। মানুষ যাতে কোনও ভাবেই সরকারি পরিষেবা থেকে বঞ্চিত না হন, সে দিকেও নজর রাখতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ এক নেতার ব্যাখ্যা, ‘রাজ্যে এমন কোনও পরিবার নেই যারা কোনও না কোনও ভাবে সরকারের পরিষেবা পান না। বিজেপিকে ঠেকাতে এঁরাই সব থেকে বড় ভরসা। প্রচারেও উন্নয়ন প্রকল্পগুলি বেশি করে তুলে ধরতে বলছেন নেত্রী।’ তাঁর দাবি, প্রায় ৯ কোটি মানুষ সরাসরি রাজ্য সরকারের কোনও না কোনও পরিষেবা পাচ্ছেন। খাদ্যসাথীর দু’টাকার চাল, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, স্বাস্থ্য সাথী, সবুজ সাথী, সমব্যথী, উচ্চশিক্ষায় স্কলারশিপ, সংখ্যালঘু স্কলারশিপ, গ্রামীণ রাস্তা, একশো দিনের কাজ, গ্রামের গরিবদের জন্য পাকা বাড়ির মতো বিভিন্ন প্রকল্প রয়েছে।
তিনি আরও জানান, সদ্য চালু কৃষকবন্ধু প্রকল্পেও ইতিমধ্যে প্রায় ১৬ লক্ষ কৃষক নাম নথিভুক্ত করেছেন। রাজ্যের কৃষকরা বছরে মাথাপিছু গড়ে ৫ হাজার টাকা সাহায্য পাবেন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো প্রথম কিস্তির আড়াই হাজার টাকার চেক এখনই তুলে দেওয়া হচ্ছে তাঁদের হাতে। ভোটের আগেই প্রায় ৭২ লক্ষ কৃষক পরিবারে সাহায্য পৌঁছে যাবে।