বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবারই এই অভিযোগ করে এসেছেন যে, ‘আসামে জাতীয় নাগরিকপঞ্জীর নামে থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষের নাম বাদ দিয়ে নিম্নমানের রাজনীতি করা হচ্ছে।’ তিনি স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, ‘এনআরসি-র নামে বাঙালি খেদাও চালাচ্ছে বিজেপি।’ দূরদর্শী মমতার এই অভিযোগ যে কতটা সত্যি তা আবারও প্রমাণ হয়ে গেল। এনআরসির চাপে আসামে ফের আত্মহত্যা করলেন এক শ্রমিক। রাজ্যের উদালগুড়ি জেলার কলাইগাঁও থানার অধীন ভোলাবাড়ি চা-বাগানের শ্রমিক ভবেন দাস (৪৫) সোমবার আত্মহত্যা করেন। গ্রামবাসীদের দাবি, নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি)-তে নাম না থাকায় হতাশায় ভুগছিলেন দিনমজুর ভবেন। সেই হতাশা থেকেই তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন বলে গ্রামবাসীদের বিশ্বাস।
প্রসঙ্গত, ৩১ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে প্রকাশিত হবে এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা। বর্তমানে চলছে তারই ঝাড়াই-বাছাই। যার ফলে আতঙ্ক বাড়ছে বাংলাভাষী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে। ২০১৭-র ৩১ ডিসেম্বর অসমে এনআরসি-র প্রথম খসড়া তালিকা প্রকাশিত হয়। প্রথম থেকেই লক্ষ্য করা যায় যে, তালিকা থেকে বাদ গেছে মূলত বাঙালিদের নাম। গত বছর ৩০ জুলাই দ্বিতীয় বা চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশিত হতে ছবিটি আরও স্পষ্ট হয়ে যায়। ৩ কোটি ২৯ লাখ ৯১ হাজার ৩৮৪ জন আবেদন করলেও চূড়ান্ত খসড়ায় ঠাঁই হয় ২ কোটি ৮৯ লাখ ৮৩ হাজার ৬৭৭ জনের। অর্থাৎ, ৪০ লাখেরও বেশি মানুষের নাম ওঠেনি খসড়ায়।
এরপর অবশ্য সংযোজন ও সংশোধন প্রক্রিয়া চালু হয়। কিন্তু সেখানেও ১০ লাখের বেশি নাগরিক আবেদন করতে পারেননি। নথি নিয়ে বিভ্রান্তির পাশাপাশি রয়েছে গরিব মানুষদের নাগরিকত্ব প্রমাণের তথ্য সংগ্রহের সমস্যাও। হতাশায়, উদ্বেগে আত্মহত্যার খবর আসতে থাকে একের পর এক। আত্মঘাতীরা বাঙালি, বলাইবাহুল্য। লক্ষণীয় এটাও, রাজ্যে হিন্দুত্ববাদী সরকার থাকলেও দেখা যাচ্ছে আত্মঘাতীরা বেশিরভাগই হিন্দু। তালিকা থেকে নাম বাদের ক্ষেত্রে অবশ্য হিন্দু-মুসলিম ততটা দেখা হয়নি। অনেকেরই অভিযোগ, বাঙালি হলেই নাম বাদ গেছে বেশি। গরিব হলে তো কথাই নেই।
অসম রাজ্য নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমন্বয় সমিতির চেয়ারম্যান তপোধীর ভট্টাচার্যর মতে, বাঙালি জাতিকেই শেষ করার চক্রান্ত চলছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাঙালিরা এখনও সজাগ হননি। তিনি বলে, উদালগুড়ির সোমবারের আত্মহত্যার ঘটনা অত্যন্ত মর্মান্তিক। এর আগেও উদালগুড়িতে এনআরসি-র কারণে আরও একজন একই পথ বেছে নিয়েছিলেন। জানা গেছে, এই ঘটনার পর এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, বংশ পরম্পরায় আসামে বসবাস করেও তাঁরা এনআরসিতে নাম তুলতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে মমতার তোলা প্রশ্নটাই এই মুহূর্তে ফের প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে, ‘বাংলায় কথা বলাটা কি অপরাধ? তা না হলে শুধুমাত্র বেছে বেছে বাঙালিদের নাম এনআরসি থেকে বাদ দেওয়া হবে কেন?’