বায়ু ও শব্দদূষণ রুখতেই রামকৃষ্ণদেবের জন্মোৎসব উপলক্ষে স্বামী বিবেকান্দনের চালু করা শতবর্ষ পুরনো আতসবাজি প্রদর্শনী বাতিল করলেন বেলুড় মঠ কর্তৃপক্ষ। এই আতসবাজি প্রদর্শনী দেখবার জন্য বেলুড়মঠ, দক্ষিনেশ্বর সংলগ্ন এলাকায় প্রচুর মানুষের সমাগম হত। গঙ্গাবক্ষে লঞ্চে করেও মানুষ দেখত রাতের খোলা আকাশে আলোর খেলা। এ বছর যা চাক্ষুস করা থেকে বঞ্চিত হবেন হাজার হাজার মানুষ।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত বলেন, “বেলুড় মঠের এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তাদের এই পদক্ষেপ সমগ্র বিশ্বের কাছে একটা বার্তা দিল। সাধারণ মানুষেরও উচিত ব্যক্তিগত এবং সমাজ জীবনে বেলুড় মঠের এই সিদ্ধান্তকে অনুসরণ করা। কারণ, শব্দবাজির পাশাপাশি বিভিন্ন আতসবাজির ধোঁয়া থেকে যে মাত্রায় বায়ুদূষণ ছড়ায় সেটা অত্যন্ত ক্ষতিকর”। বেলুড় মঠ কর্তৃপক্ষ পরিবেশ দফতর এবং সমস্ত প্রশাসনিক স্তরে এই বাজি প্রদর্শনী বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন। তবে এই বাজি প্রদর্শনী স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেল কিনা সে ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। সাধারণ মানুষকে জানানোর উদ্দেশ্যে বেলুড় মঠ চত্বরেও একাধিক জায়গায় সিদ্ধান্তের কথা লিখিতভাবে নোটিস আকারে জানিয়ে দিয়েছেন মঠ কর্তৃপক্ষ।
রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের জন্মতিথির পর দ্বিতীয় রবিবার বেলুড় মঠ চত্বরে তাঁর জন্মোৎসব পালিত হয়। সেখানেই সন্ধে ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত রংবাহারি ওই আতসবাজি প্রদর্শনী হয়ে থাকে। এবার ৮ মার্চ রামকৃষ্ণের জন্মতিথি। সেই উপলক্ষেই ১৭ মার্চ, রবিবার বেলুড় মঠে ওই বাজি প্রদর্শনী হওয়ার কথা ছিল কিন্তু এত বছরের পুরোনো এক উৎসব এবার বন্ধ হয়ে গেল। এই বাজি প্রদর্শনী দেখতে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ তো বটেই, দেশ-বিদেশের বহু মানুষ বেলুড় মঠে আসতেন। এ প্রসঙ্গে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দ মহারাজ বলেন, “বায়ু তথা পরিবেশ এবং শব্দ দূষণের কুফলের কারণেই আমরা এ বছর বাজি প্রদর্শন বন্ধ করে দিয়েছি। এছাড়াও আমাদের গঙ্গার পাড় মেরামত ও সংস্কারের কাজ চলছে। গঙ্গার পাড়ে ওই প্রদর্শনী দেখতে বহু দর্শনার্থীর সমাগম ঘটবে। কিন্তু এই অবস্থায় আমরা সেটা নিরাপদ মনে করিনি। তাই দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার কারণেও এ বছর বাজি প্রদর্শনী বন্ধ রাখা হচ্ছে। পরের বছর এই প্রদর্শনী আর হবে কিনা তা চূড়ান্ত হবে। তেমন হলে বাজি প্রদর্শনীর পরিবর্তে আরও আর্কষণীয় লেজার শো–র ব্যবস্থা করা হতে পারে। তবে এ বছর ঠাকুরের জন্মোৎসবে বাজি প্রদর্শনী বন্ধ থাকলেও অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যেমন হয় তেমনটাই হবে”।