পুলওয়ামায় জঙ্গী হামলার পর এবং লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে গোটা দেশেই জ্বলছে ক্ষোভের আগুন। এই মুহূর্তে আমজনতার একটা বড় অংশের মধ্যেই পাকিস্তান-বিরোধী মনোভাব তুঙ্গে। কিন্তু যে ভাবে সেনাবাহিনীর প্রতি আমনাগরিকের ভাবাবেগকে নিজের দিকে টানতে চাইছে বিজেপি, তা দেখে একদিকে যেমন ক্ষুব্ধ বিরোধী শিবির, তেমনি দানা বেঁধেছে বিতর্কও। সেই বিতর্ককেই আরও কিছুটা উস্কে দিলেন উত্তর-পূর্ব দিল্লীর বিজেপি সাংসদ অভিনেতা মনোজ তিওয়ারি। ভারতীয় সেনার সাফল্যে বিজেপির বিজয়মিছিল! আর সেই মিছিলে একেবারে সেনার উর্দি পরে যোগ দিলেন বিজেপির প্রদেশ সভাপতি মনোজ!
রবিবার দিল্লীতে এক বাইক মিছিল করে বিজেপি। তাতে নেতৃত্ব দেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হর্ষ বর্ধন, বিজয় গোয়েলরা। দিল্লী প্রদেশ সভাপতি মনোজ তিওয়ারিকে দেখা গেল সেনার পোশাক পরেই সেই ‘বিজয় সঙ্কল্প বাইক র্যালি’তে নেতৃত্ব দিতে। সেনার ভঙ্গিতে ভ্রূ-র কাছে আঙুল ঠেকিয়ে স্যালুটও করেন তিনি। নিজেও বাইক-র্যালির ছবি পোস্ট করেছেন মনোজ। সেখানেও দেখা যাচ্ছে সেনার উর্দি পরেই প্রচারে বেরিয়েছেন তিনি। আর তার পরেই বিতর্কের ঝড় ওঠে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে। সকলের একটাই প্রশ্ন, দলীয় প্রচারে কী ভাবে সেনার উর্দির মতো পোশাক পরার স্পর্ধা দেখালেন তিনি?
প্রসঙ্গত, সেনাবাহিনীর উর্দি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট নীতি-নিয়ম রয়েছে। এমনকী ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৭১ ধারা অনুযায়ী প্রতারণার উদ্দেশ্যে কোনও সরকারি কর্মীর পোশাক বা তাঁর ব্যবহৃত কোনও সামগ্রীর ব্যবহার আইনত দন্ডনীয়। অভিযোগ প্রমাণ হলে তিন মাসের কারাদন্ড কিংবা দু’শো টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা দু’টোই হতে পারে। এ কথা সত্যি মনোজের ক্ষেত্রে সে অভিযোগ খাটে না। কিন্তু এটাও সত্যি যেখানে সেখানে ‘সেনার উর্দি’র মতো পোশাক ব্যবহার করা যায় না। তাছাড়া কিছু চালু রীতিও রয়েছে এ ক্ষেত্রে। প্রচারের সময় সেটাও কেন মাথায় রাখলেন না মনোজ, উঠছে প্রশ্ন।
সকলেরই এক অভিযোগ, একজন জনপ্রতিনিধি হয়েও মনোজ এ সব মাথায় রাখেননিই। উল্টে সেনাবাহিনীর প্রতি জনগণের ভাবাবেগকে দলীয় স্বার্থে কাজে লাগাতে চেয়েছেন তিনি। ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে বিরোধীরা। তৃণমূলের সর্বভারতীয় মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন যেমন টুইট করে বলেন, ‘নির্লজ্জ! বিজেপি সাংসদ ও দিল্লী বিজেপির সভাপতি মনোজ তিওয়ারি নিরাপত্তা বাহিনীর উর্দি পরে ভোট চাইছেন। বিজেপি ও মোদী-শাহরা আমাদের দেশের বীর জওয়ানদের অপমান করছেন। ঘৃণ্য রাজনীতি করছেন তাঁদের নিয়ে। আর তার পর তাঁরাই আবার বক্তৃতা দিচ্ছেন দেশপ্রেম নিয়ে। সঙ্কীর্ণ চিত্ত!’
উল্লেখ্য, পাঠানকোটের বায়ুসেনা ঘাঁটিতে যে হামলা হয়েছিল সেখানে সেনাবাহিনীর উর্দির মতো পোশাক পরেই এসেছিল ছয় জঙ্গি। তার পরেই সেনার তরফ থেকে পাঞ্জাব ও সংলগ্ন এলাকার সাধারণ দোকানিদের কাছে অনুরোধ জানানো হয়, সেনার ‘উর্দি’ যেন বিক্রি না করেন তাঁরা। আমজনতার কাছেও অনুরোধ করা হয়েছিল, তাঁরাও যেন এ ধরনের পোশাক না কেনেন। প্রায় অলিখিত নিষেধাজ্ঞাই জারি হয়েছিল তখন। কিন্তু বাস্তব হল, সাধারণ দোকান থেকে শুরু করে অনলাইন, প্রায় সর্বত্রই গাঁটের কড়ি ফেললে মেলে এই উর্দির মতো পোশাক।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক দিন ধরেই ভারতীয় সেনার সাহসিকতা ও পরাক্রমকে ‘রাজনৈতিক স্বার্থ’-এ কাজে লাগানোর অভিযোগ উঠেছে বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে। মনোজের কর্মকান্ডে তা প্রমাণিতও হয়ে গেল। বস্তুত, সেনার সাফল্যে ভর করেই আরও একবার বিজেপির ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন দেখছেন মনোজ-সহ গোটা গেরুয়া শিবিরই। উল্লেখ্য, পাকিস্তানে বিমানহানার পর কর্ণাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা বি এস ইয়েদুরাপ্পা বলেন, বিজেপি এবার কর্ণাটকে ২২টা আসন পাবে। আবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া বলেন, ‘পাকিস্তানকে বার্তা দিতেই বালাকোট অভিযান। বিমানহানায় ক্ষয়ক্ষতি তেমন হয়নি। সেই উদ্দেশ্যও আমাদের ছিল না।’