পুলওয়ামায় সন্ত্রাসবাদী হামলার মূলচক্রী বলে অভিযুক্ত জইশ-ই-মহম্মদ প্রধান মাসুদ আজহার পাকিস্তানেই আছে। আর জইশের মতো কট্টর সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে এখনও নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছে ইসলামাবাদ। এবং সেটা পুলওয়ামা কান্ডের পরেও। পরপর দু’দিন, দু’টি সাক্ষাৎকারে এ কথা কার্যত স্বীকারই করে ফেললেন পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি।
প্রথমদিন মার্কিন সংবাদসংস্থা সিএনএন-কে। এবং তার পরের দিন ব্রিটিশ সংস্থা বিবিসিকে। দু’দিনের দু’টি সাক্ষাৎকারে মোট তিনটি বোমা ফাটিয়েছেন পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী। বিবিসি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বোমা ফাটিয়ে কুরেশি বললেন, ‘আমাদের এখানকার (পাকিস্তান) আর ওদের (জইশ) চেনাজানা লোকজনের মাধ্যমেই সেই যোগাযোগটা রয়েছে।’ সেই যোগাযোগ রেখে চলার আভাস অবশ্য শুক্রবার সিএনএন-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারেই মিলেছিল। কুরেশি ও’দিন বলেছিলেন, ‘মাসুদ আজহার (জইশ প্রধান) পাকিস্তানেই রয়েছেন। তবে তিনি এতটাই অসুস্থ যে বাড়ি থেকে বেরতে পারছেন না।’ তাঁর ডায়ালিসিস চলছে বলেও জানান তিনি।
কুরেশির প্রথম ও দ্বিতীয় স্বীকারোক্তিতে প্রমাণিত, জইশ-ই-মহম্মদ ও তার প্রধান মওলানা মাসুদ আজহার পাকিস্তানের মাটি থেকে শুধু সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপই চালায় না, পাক সরকারের দায়িত্বশীল আধিকারিকদের সঙ্গে তাদের নিয়মিত ও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। এতটাই ঘনিষ্ঠ সে যোগ যে, ভিভিআইপি-র মতোই মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গী নেতার শরীর-স্বাস্থ্যের নিয়মিত এবং খুঁটিনাটি খোঁজ-খবর থাকে পাক বিদেশমন্ত্রী ও প্রশাসনের কাছে।তবে কথায় আছে, মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি। তাই জইশ নিজে পুলওয়ামা কাণ্ডের দায় স্বীকার করার পরেও ওই ঘটনায় যে জইশের হাত রয়েছে, তা মানতে চাননি কুরেশি।
বিবিসি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পাক বিদেশমন্ত্রী বলেছেন, ‘এ ব্যাপারে সন্দেহ, সংশয় রয়েছে।’ তবে পুলওয়ামা কান্ডের পর বিন্দুমাত্র দেরি না করেই জইশের মুখপাত্র মহম্মদ হাসান একটি বিবৃতিতে জানিয়েছিল, ‘ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনীর কয়েক ডজন গাড়ি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।’ এ-ও জানান হয় যে, আত্মঘাতী জঙ্গী আদিল আহমেদ জইশের সদস্য। পরে জইশের তরফে দারের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়। যেখানে দেখা যায়, আদিলের পিছনে টাঙানো রয়েছে জইশের পতাকা। এরপরেও পুলওয়ামা কান্ডে জইশের জড়িত থাকার ব্যাপারে পাক প্রশাসনের ‘সংশয় রয়েছে’ বলে ওই সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন পাক বিদেশমন্ত্রী।
এর আগেও পাক বিদেশমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন কুরেশি। তাঁর পুরনো ট্র্যাক রেকর্ড দেখলে সহজেই চোখে পড়বে মিথ্যাভাষণে পাক বিদেশমন্ত্রীর জুড়ি মেলা ভার। ২৬/১১ মুম্বই জঙ্গী হামলায় হাফিজ সইদের পরিকল্পনা, সক্রিয় যোগ ও দায় নিয়ে ভারত কেন, বিশ্বের প্রায় কোনও দেশেরই কোনও সংশয় ছিল না। শুধু তাই নয়, ইজরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা আইডিএফ, মোসাদ এবং মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-র কোনও সন্দেহ ছিল না যে করাচির কন্ট্রোল রুমে বসে হাফিজ সইদ-ই মুম্বই হামলা পরিচলনা করে। কিন্তু ২৯ নভেম্বর, ২০০৮-এ মুম্বই হামলার ঠিক তিন দিন পর বিবিসি-র মুখোমুখি হয়ে পাকিস্তানের তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী কুরেশি বলেছিলেন, মুম্বই হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের কোনও যোগ নেই। পাকিস্তানের মাটি সে কাজে ব্যবহার হয়নি।
আবার গতকাল যাঁর হালহকিকত জানিয়েছেন কুরেশি, সেই কট্টর জঙ্গী মাসুদ আজহারকে কেন গ্রেফতার করছে না ইসলামাবাদ, সেই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা তো ভারতের কাছে তথ্যপ্রমাণ চেয়েছি। সেই সব পেলেই আমরা আদালতে যেতে পারি। তার পর আদালত যা বলবে, তাই করা হবে।’ জইশের মতো আরও কোন কোন জঙ্গি সংগঠন পাকিস্তানের কোথায় কোথায় ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে, তারা কোন পথ দিয়ে ঢুকে ভারতে হামলা চালাচ্ছে, তার খুঁটিনাটি জানিয়ে পাকিস্তানকে গতকালই একটি ডসিয়ার দেওয়া হয় ভারতের তরফে। সে বিষয়ে কুরেশি বলেন, ‘সেটা (ডসিয়ার) আমরা খতিয়ে দেখছি।’ যদিও সেই ডসিয়ার খতিয়ে দেখার পর পাক প্রশাসনের তরফে আদৌ কোনও তদন্ত করা হবে কিনা, তা নিয়ে যথেষ্টই সংশয় রয়েছে কুটনৈতিক মহলের।