ভারতীয় এয়ারস্ট্রাইকের ফলে কতজন জঙ্গী মারা গেছেন? মোদী সরকারকে নির্দিষ্ট সংখ্যা জানানোর কথা বলেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি নেতারা বুক ঠুকে বলছেন, সাড়ে তিনশো জঙ্গীকে নিকেশ করা গেছে। সংবাদমাধ্যমও খোলাখুলি জানাচ্ছে ২০০-৩০০ জঙ্গীকে খতম করে দেওয়া হয়েছে। অথচ ভারতীয় বায়ুসেনা দৃঢ়তার সঙ্গে বারবার জানিয়ে আসছে, ‘কোনও সংখ্যা নেই’।
গোটা ব্যাপারটা আরও ঘুলিয়ে দিয়েছেন বিজেপি সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আলুওয়ালিয়া। সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি দাবি করেছেন, কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ক্ষয়ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে এয়ারস্ট্রাইকও করা হয়নি। শুধু পাকিস্তানকে ভয় দেখানোই ছিল বিমানহানার মূল উদ্দেশ্য। তাহলে মৃত জঙ্গীদের সংখ্যা ছড়াল কে? বিরোধীদের অভিযোগ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন খোদ জঙ্গী নিকেশের সংখ্যা দিয়েছেন।
এখন প্রশ্ন উঠছে, বায়ুসেনার ঘোষণার সঙ্গে সংবাদমাধ্যম ও বিজেপি নেতাদের মন্তব্যের কোনও মিল নেই কেন? যখন ভারতীয় বায়ুসেনা কোনও হতাহতের খবর দিচ্ছে না তখন গেরুয়া শিবিরের নেতারা ও সংবাদমাধ্যম মৃতের সংখ্যা পেল কোথা থেকে? কে এই পরিসংখ্যান দিল? কোন সূত্র থেকে পাওয়া গেল? সংবাদমাধ্যম কি এই সূত্রের দায় নেবে? নাকি এটা ভোটের স্বার্থে শুধুই প্রচার?
পুলওয়ামা জঙ্গী হানার পরেই নিরাপত্তায় গাফিলতির প্রমান পাওয়া গিয়েছিল। ঘটনার দু’সপ্তাহ পর এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে, এই ঘটনা থেকে নজর ঘোরাতে এবং যুদ্ধ যুদ্ধ হাওয়া তুলে মৃত জওয়ানদের আবেগকে ভোট বাক্সে কাজে লাগাতেই মোদী সরকারের এই কৌশলী এয়ারস্ট্রাইক। এবং গোটা বিষয়টাই যে ভোটের দিকে তাকিয়ে সেটা পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন বিজেপি নেতা ও কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরিয়াপ্পা। তিনি জানিয়েছেন, এই এয়ারস্ট্রাইকের ফলে কর্নাটকে বিজেপির ২২ টি আসন নিশ্চিত হয়ে গেল।
অর্থাৎ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম দিন থেকে যে আশঙ্কা করেছিলেন, ‘যুদ্ধ’ নিয়ে বিজেপির সেই ভোটের রাজনীতি আজ জলের মতো পরিষ্কার। শুধু রাজনীতি নয়, বিজেপির আচরণ থেকে এটা স্পষ্ট যে, দেশের নিরাপত্তা নিয়েও তারা বিন্দুমাত্র চিন্তিত নয়। ক্ষমতা ধরে রাখার স্বার্থে শুধু নিজেদের আখের গোছাতেই ব্যস্ত গেরুয়া শিবিরের নেতা-নেত্রীরা।
