গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় জঙ্গী হামলার পর থেকে ক্রমশই উত্তেজনা বেড়ে চলেছে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে। এর মধ্যে বুধবার পাকিস্তান ভারতীয় পাইলটকে বন্দী করলে অবস্থা আরও জটিল হয়ে ওঠে। সম্প্রতি ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে এই যে যুদ্ধোন্মাদনা শুরু হয়েছে, এবার তার প্রতিবাদে লাহৌরের প্রেস ক্লাবের সামনে একটি প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করে সেখানকার নাগরিক সমাজ।
এ প্রসঙ্গে পাকিস্তান সাংবাদিক সেহর মির্জা জানিয়েছেন, তিনি ছাড়াও তাঁর মতো পাকিস্তানের বহু যুদ্ধবিরোধী মানুষ সেই মিছিলে উপস্থিত ছিলেন। প্রতিবাদে যোগ দিয়েছিলেন সেখানকার বহু মানবাধিকার ও সমাজকর্মী এবং শিল্পীরা। ছিলেন ফৈয়জ আহমেদ ফৈয়জের কন্যা সালিমা হাসমি, আসমা জাহাঙ্গীরের মেয়ে মুনিজা জাহাঙ্গীর, চিত্রপরিচালক আম্মর আজিজ, নাট্যকার ও সাংবাদিক সৈয়দ আহমেদ, মানবাধিকার কর্মী মরিয়ম সৈয়দ, সমাজকর্মী মুসরত মির্জা। প্রায় দু’শো জন এই মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন।
সেহর জানিয়েছেন, ‘ভূখণ্ডে ঘটে চলা হিংসা ও নাশকতার বিরুদ্ধে স্লোগান দিই আমরা। আমাদের আরও দাবি ছিল, ভারতের অভিনন্দন বর্তমানকে তাঁর দেশে ফিরিয়ে দিতে হবে। পরে জানতে পারলাম, আমরা যখন প্রেস ক্লাবের সামনে এই দাবি তুলছিলাম, সেই সময়েই অভিনন্দনের মুক্তির কথা ঘোষণা করা হয়েছে। দারুণ এই খবরটা পেয়ে সত্যিই আমরা খুব খুশি হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘পুলওয়ামা হামলার পরে সোশ্যাল মিডিয়া হিংসাত্মক মন্তব্যে ভরে গিয়েছিল। সীমান্তের ও-পারের মানুষ জন তখন রাগে-যন্ত্রণায় ফুঁসছেন। অথচ, সীমান্তের এ-পারে তখন অদ্ভুত এক নীরবতা। আমার মনে হয়েছিল এই সময়ে ভারতের বন্ধুদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। সহমর্মিতা দেখানো উচিত। সেই ভাবনা থেকেই, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ভারতের মানুষগুলির জন্য ভালবাসা, সহানুভূতির বার্তা দেওয়ার জন্য, আমি #অ্যান্টিহেটচ্যালেঞ্জ প্রচার শুরু করি।’
এরপরেই দেখা যায়, সে দেশের বহু মানুষ পুলওয়ামা কান্ডের বিরোধীতা করে, শান্তির বার্তা দিতে সেহরের উদ্যোগে শামিল হন। বর্তমানে পাকিস্তানের কূটনীতি যখন এমন এক বিন্দুতে দাঁড়িয়ে রয়েছে, যেখানে যে কোনও মুহূর্তে একটা যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে, সেখানে সেহরের মতো পাকিস্তানি বুদ্ধিজীবিদের মুখ খুলতে দেখে আশার সঞ্চার হচ্ছে।
সেহরের সাফ কথা, “আমি আবারও বলতে চাই, যুদ্ধ মানবতাকে ধ্বংস করে। আর কিছুই পাওয়া যায় না এর থেকে। এই প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দিতে চাই, যুদ্ধবিরোধী কবি সাহির লুধিয়ানভির কথাটি, ওয়ার ইটসেল্ফ ইজ আ প্রবলেম, হাউ উড ওয়ার রিজলভ প্রবলেমস?”
একজন সাংবাদিক হিসেবে তাঁর পরামর্শ, ‘দুই দেশেরই উচিত প্রতিরক্ষা বাজেটে ব্যয়বরাদ্দ কমিয়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, মহিলাদের ওপর হিংসা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর অভাবের মতো দেশের সাধারণ অথচ জরুরি সমস্যাগুলির দিকে নজর দিক। আমার মনে হয় সেটাই একমাত্র শান্তি আনতে পারে।’