সাধারণ মানুষের যে কোন সমস্যাতে সবসময়েই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে থাকে কলকাতা পুলিশ। এবার এক চরম মানবিকতার নিদর্শন দেখাল কলকাতা পুলিশ। পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে দেরি হয়ে যাওয়ার থেকে এক উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে বাঁচাল পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই ছাত্রীটি বড়বাজার এলাকার মাহেশ্বরী বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী। তার বাড়িও ওই এলাকায়। এই স্কুলের ছাত্রীদের সিট পড়েছিল শিয়ালদহের ভিক্টোরিয়া কলেজে। সকাল দশটা থেকে পরীক্ষা শুরু। সকালে উঠে পড়াশোনা সারতেই দেরি হয়ে যায় তার। পরিকল্পনা করেছিল, শ্যামবাজারের মোড়ে এসে বাস ধরে পৌঁছবে পরীক্ষা কেন্দ্রে। কিন্তু সকাল থেকেই বৃষ্টি। বাড়ি থেকে বের হতেই গোড়ালি ডোবা জল। গাড়ি পাওয়া যাচ্ছিল না। জল পেরিয়ে এসে যখন সে গাড়ি পেল, তখন অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছে। ঘড়ির কাঁটা ঘুরে চলেছে। কিন্তু বৃষ্টিতে আর গাড়িও যেন নড়ছিল না। কয়েকটি রাস্তায় যানজটও ছিল। এত কিছুর পর যখন সে শ্যামবাজারের পাঁচমাথা মোড়ে এসে পৌঁছল, তখন দশটা বাজতে আর মিনিট দশেক বাকি। মেট্রো করে সরাসরি পৌঁছনোর উপায় নেই শিয়ালদহের ওই পরীক্ষাকেন্দ্রটিতে।বাস ধরে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছনোর চেষ্টা করবে কি? অনেকটা হতাশ হয়েই শ্যামবাজারের পাঁচমাথা মোড়ে দাঁড়িয়েই হাপুস নয়নে কাঁদতে শুরু করে ওই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী।
ওই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী যখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাঁদছে, তখনই শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়ে আসেন শ্যামপুকুর থানার অতিরিক্ত ওসি সুব্রত দাস। মেয়েটির কাছ থেকে গোটার ঘটনার শোনার পর আর দেরি করেননি তিনি। কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্টকে বলেন, এখনই পুরো বিষয়টি লালবাজারের ট্রাফিক কন্ট্রোলরুমকে জানাতে। তিনি ছাত্রীটিকে নিয়ে রওনা হবেন। হাতে আর মাত্র মিনিট চারেক সময়। ‘গ্রিন করিডর’ না তৈরি করলে ছাত্রীটি পরীক্ষা দিতে পারবে না। ট্রাফিক পুলিশের সহযোগিতায় তখনই শ্যামবাজার থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত ‘গ্রিন করিডর’ তৈরি করা হয়। ‘গ্রিন করিডর’ দিয়ে শ্যামপুকুর থেকে শিয়ালদহ চার মিনিটে পৌঁছয় পুলিশের গাড়ি। কাঁটায় কাঁটায় তখন সকাল দশটা। গাড়িটি এসে দাঁড়ায় ভিক্টোরিয়া কলেজের সামনে। পুলিশ অফিসারের সহযোগিতায় পরীক্ষার হলে ঢোকে সে। ছাত্রীটি নির্বিঘ্নেই পরীক্ষা দিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। যখন সবাই কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ তোলে পুলিশের বিরুদ্ধে ঠিক সেই সময়েই নিশ্চুপে এক শিক্ষার্থীর জীবন বাঁচিয়ে দিলেন পুলিশ।