প্রয়াত হলেন হাতিদের মন বোঝার মানুষ ধৃতিকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী৷ মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। আজ সকালে কলকাতায় নিজের বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ধৃতিকান্তবাবু। দুপুরে কেওড়াতলা মহাশ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
অধুনা বাংলাদেশের ময়মনসিংহে যে-বাড়িতে জন্মেছিলেন ধৃতিকান্ত, সেই বাড়ির নিজস্ব হাতির সংখ্যাই ছিল পনেরো। বড়দের সঙ্গে জমিদারি এলাকা পরিদর্শন আর শিকারের অভিযানে গিয়ে বাড়ির হাতি শর্মিলা আর চন্দ্রচূড়দের পিঠে চাপার শুরু তখন থেকেই। গৌরীপুরের রাজ পরিবারের কিংবদন্তিসন্তান প্রকৃতীশচন্দ্র বড়ুয়ার কাছে হাতি নিয়ে হাতেখড়ি তখনই। দেশভাগের সময় ষোলো বছর বয়সে ময়মনসিংহ ছেড়ে কলকাতায় চলে এলেও হাতির সঙ্গে তাঁর সম্পর্কে কখনও বিচ্ছিন্নতা আসেনি। বিচ্ছিন্নতা এল শুক্রবার সকাল ৮টায়।
পূর্ববঙ্গে তাঁর বাড়িতে কয়েকটি পোষা হাতি ছিল। হাতিকে সঙ্গী করেই বেড়ে ওঠা ধৃতিকান্তবাবুর। শিকারি হিসাবে নাম করেন তিনি। শিকার করতে এসে উত্তরবঙ্গ তথা অসমের জঙ্গল কে হাতের তালুর মতো চেনা গিয়েছিল তাঁর। এমনকি উত্তরবঙ্গের হাতিদের চারিত্রিক নানান ব্যাপার এতটাই ভালোভাবে জানতেন তিনি যে, হাতি সংক্রান্ত কোনও সমস্যায় পড়লে বন দফতরের কর্তারা ধৃতিকান্তবাবুর শরণাপন্ন হতেন। বন দফতরের নজরদারি সহ নানান কাজে ছয়ের দশক থেকে প্রচুর হাতির প্রয়োজন হয়ে পড়ে। ভাল জাতের হাতি কেনার জন্য কয়েক দফায় বন দফতরকে শোনপুর মেলা থেকে হাতি কিনে আনতে হয়েছিল। কোন হাতির জাত কেমন তা হাতির কিছু আচরণ দেখেই বুঝে ফেলতেন৷
হাতি আর জঙ্গল ছিল ধৃতিকান্ত লাহিড়ী চৌধুরীর জীবন। তাঁর সাহিত্যচর্চাও জঙ্গল জীবনকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে। তাঁর প্রকাশিত ‘হাতি ও বনজঙ্গলের কথা’, ‘হাতির বই’, ‘বৈঠকী’, ‘জঙ্গলগাথা ও রসনাবিলাস’, ‘জীবনের ইন্দ্রধনু’, ‘আ ট্রাঙ্ক ফুল অব টেলস’, ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান এলিফ্যান্ট বুক’ ইত্যাদি। তাঁর অসংখ্য প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পত্রিকায় ও সংকলনে। ‘হাতির বই’-এর জন্য ২০০৭ সালে আনন্দ পুরস্কার পেয়েছিলেন ধৃতিকান্ত।
বন দফতরেরর অবসরপ্রাপ্ত মুখ্য বন পাল উজ্জ্বল ভট্টাচার্যের কথায়, “হাতিঘটিত কোন সমস্যার সম্মুখীন হলে আমরা ধৃতিকান্তবাবুর পরামর্শ নিতাম। ওঁর মৃত্যুতে একটি বিরাট ক্ষতি হল। হাতিদের পিল খানা, তাদের পরিচর্যা, খাদ্যাভ্যাস-সহ নানান বিষয়ে তাঁর পরামর্শ নিতাম নিয়মিত।”
হাতির সঙ্গে তাঁর সাত দশকের সম্পর্ক। ধৃতিকান্তবাবুর মৃত্যুতে শোকাহত রাজ্যের বন দফতরের কর্তা থেকে মাহুত, হাতি-প্রেমিক সকলে। রাজ্যের বন মন্ত্রী বিনয় কৃষ্ণ বর্মন ধৃতি কান্ত বাবুর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।