‘অভি বেঁচে আছে, সাহসিকতার সঙ্গে কথা বলছে। ও একজন সত্যিই সাহসী সেনা। ছেলের জন্য গর্ব হচ্ছে৷’ বৃহস্পতিবার এই কথাগুলি যখন বলছেন অভিনন্দন বর্তমানের বাবা তথা প্রাক্তন বায়ুসেনা অফিসার, তখনই বোঝা গিয়েছিল তাঁর মনের ভিতরে খেলা করছে অদ্ভুত এক উত্তেজনা। আজও তেমনই এক অনুভূতি হচ্ছে তাঁর এবং তাঁর স্ত্রীর। তবে একটু দুশ্চিন্তা, খানিক ছটফটানির সঙ্গে আজ অনেকটা স্বস্তির ছাপও ফুটে উঠেছে তাঁদের চোখে-মুখে।
বাইরে তখন এক বিমান ভর্তি মানুষ উঠে দাঁড়িয়েছেন। শুধু উঠে দাঁড়ানোই নয়, প্রবল করতালিতে স্বাগতও জানাচ্ছেন তাঁদের। হবে না-ই বা কেন। তাঁরা যে ছেলেকে আনতে যাচ্ছেন! সেই ছেলে, যে ছেলে শত্রুদেশের হাতে বন্দী থাকার পরে মাথা উঁচু করে দেশে ফিরছে আজ। সেই ছেলে, যে ছেলে শুধু সৌজন্য আর শৌর্যে দিল জিতে নিয়েছেন সারা দেশের! যে ছেলেকে টিভির, মোবাইলের স্ক্রিনে দেখে সারা দেশ একসঙ্গে বলে উঠেছে, অভিনন্দন!
ভারতীয় বায়ুসেনার উইং কম্যান্ডার অভিনন্দন বর্তমান বুধবার গ্রেফতার হয়েছিলেন পাক সেনাদের হাতে। তাঁর মিগ-২১ গুলি করে নামিয়েছিল পাক সেনা। তার পরেই পাক গণমাধ্যমগুলির মাধ্যমে সামনে আসে অভিনন্দনের ভিডিও। অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায়, সৌজন্যের সঙ্গে তাঁকে কথা বলতে দেখা যায় পাক সেনাদের সঙ্গে। সব রকম প্রয়োজনীয় সহায়তা করার পরে, অন্য কিছু প্রশ্নে তাঁকেই বলতে শোনা যায়, ‘সরি স্যার, আই অ্যাম নট সাপোজড টু টেল ইউ দ্যাট।’
চরম বিপদের মুখে পড়েও অভিনন্দনের এই স্থিরতা, দৃঢ়তা, সংযম, সৌজন্যবোধ বিস্মিত করেছে সকলকে। তবে সমস্ত বিস্ময় এক দিকে, মা-বাবার দুশ্চিন্তা আর এক দিকে। সারা রাত ঠায় বসে থেকেছেন তাঁরা, ভেবেছেন, কখন ছাড়া পাবে তাঁদের অভি! উল্টো দিকে, কূটনৈতিক চাপের মুখে অভিনন্দনকে শুক্রবার ছেড়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই ফ্লাইটের টিকিট বুক করে প্লেনে ওঠেন প্রাক্তন এয়ার মার্শাল এস বর্তমান এবং তাঁর স্ত্রী শোভা বর্তমান। অভি-কে আনতে যাওয়ার সে যাত্রা মুখরিত হয়ে উঠেছে সহযাত্রীদের অভিবাদনে।
বৃহস্পতিবার মাঝরাতেই দিল্লী পৌঁছন তাঁরা। এর পরেই তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় অমৃতসর। পরিকল্পনা অনুযায়ী, আজই দুপুর দু’টোয় ওয়াঘা বর্ডারের কাছে ছেলেকে ফেরত পাবেন তাঁরা। ‘একজন ভালো যুদ্ধবিমানের চালক হতে গেলে কী লাগে?’
‘খারাপ মনোভাব…’ এক টেলিভিশন তথ্যচিত্রে এটা বলেই সকলকে হতবাক করে দিয়েছিলেন কম্যান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। সেই ‘খারাপ মনোভাব’-এর ভাল মানুষটিই তাঁদের ছেলে। তাঁকেই আজ দেশে ফিরিয়ে আনতে যাচ্ছেন তাঁরা। আর এই গর্বিত বাবা-মার মতোই ওয়াঘা সীমান্তে অভিনন্দনকে জড়িয়ে ধরার জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছে গোটা দেশ।