‘একজন ভালো যুদ্ধবিমানের চালক হতে গেলে কী লাগে?’
‘খারাপ মনোভাব…’ এক টেলিভিশন তথ্যচিত্রে এটা বলেই সকলকে হতবাক করে দিয়েছিলেন কম্যান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। এখন যে মানুষটির নাম দেশের মুখে মুখে ঘুরছে।
দেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা ও দায়বদ্ধতা দেখিয়ে পাকিস্তানের টার্গেটে থাকা ভারতীয় সেনার ঘাঁটিগুলিতে আঘাত আটকে দিতে পেরেছেন অভিনন্দন। ভারতে যাতে পাকিস্তান আকাশপথে হামলা না করতে পারে, সেজন্য নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাকিস্তানের এফ-১৬ বিমান তাড়া করে পাক অধীকৃত কাশ্মীরে চলে গিয়েছেন অভিনন্দন।
মাঝ আকাশে তখন তুমুল লড়াই চলছে। ভারতের অন্য বিমান তখন অভিনন্দনকে সতর্ক করেছিল, তবে এফ-১৬কে কব্জা করে নিয়েছিলেন অভিনন্দন। আর-৭৩ এয়ার টু এয়ার ক্ষেপণাস্ত্রও ছোঁড়েন। যার ফলে পাকিস্তানি এফ-১৬ আছড়ে পড়ে মাটিতে। তবে একইসঙ্গে অভিনন্দনের বিমানের ডানায় ধাক্কা লাগে। যার ফলে তাঁকে বাধ্য হয়ে নামতে হয় ও তিনি গিয়ে পড়েন পাক অধীকৃত কাশ্মীর অংশে। সেখানেই পাক সেনা তাঁকে হেফাজতে নেয়।
পাকিস্তান একেবারে মনস্থির করে ভারতীয় সেনার ঘাঁটিতে আক্রমণ করবে বলে এসেছিল। তবে বীর কম্যান্ডার অভিনন্দনের উপস্থিতি ও ভারতীয় বায়ুসেনার কারণে পাকিস্তান তাঁদের লক্ষ্যে সফল হয়নি। এমনকী পাকিস্তানি সেনার হাতে ধরা পড়ার আগেও চূড়ান্ত বিক্রম দেখিয়ে গিয়েছেন অভিনন্দন।
ভারত-পাক সীমান্তে অভিনন্দনের যুদ্ধবিমান আছড়ে পড়ার পর ঠিক কী ঘটেছিল? জানা যাচ্ছে, যুদ্ধবিমান ভেঙে পড়ার প্রচণ্ড শব্দে সেখানে জড়ো হয়ে গেছিলেন গ্রামবাসীরা। বিমানের রাডার থেকেই অভিনন্দন বুঝেছিলেন পাকিস্তানে ঢুকে পরেছেন তিনি। তারপরেও নিশ্চিত হওয়ার জন্য, গ্রামবাসীদের জিজ্ঞাসা করেন তিনি, এটা কোথায়? তাঁর কাছে ছিল আগ্নেয়াস্ত্র এবং জরুরী কাগজপত্র। এলাকাবসীর কাছে জবাব পাওয়ার পরে পাক বিরোধী স্লোগান দেন অভিনন্দন। তখন গ্রামবাসীরা পাথর নিয়ে তাঁর ওপর হামলা করে। না, নিরীহ গ্রামবাসীদের ওপর আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার করেননি প্রশিক্ষিত উইং কমাণ্ড্যার। প্রথমে শূন্যে গুলি চালিয়ে উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেন। তারপর ছুটে গিয়ে ঝাঁপ মারেন একটি পুকুরে। নিজের কাছে থাকা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কিছু গিলে ফেলেন। কিছু জলে ভিজিয়ে নষ্ট করে ফেলেন। যাতে পাকিস্তানের হাতে কিছু না পৌঁছয়।
এই সবই তিনি করেছেন যখন শরীর ছড়ে গিয়েছে। রক্ত ঝরছে। পাক অধীকৃত কাশ্মীরের স্থানীয়রা তাকে ঘিরে ফেলে হামলা চালিয়েছে। সেই প্রতিকূল সময়ে মাথা ঠাণ্ডা রেখে নিরীহ গ্রামবাসীদের গায়ে আঁচড় না কেটেও নিজের দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন সবার আগে। পাকিস্তানি জনতা তাঁকে ঘিরে ধরে মারধর করলেও হাতের অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র একবারের জন্যও ব্যবহার করেননি তিনি। ভয়ঙ্কর প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন অভিনন্দন।
এইজন্যই তিনি বলতে পারেন, ভালো যুদ্ধবিমানের চালক হতে গেলে প্রয়োজন খারাপ মনোভাব। কারণ, খারাপ মনোভাবই আমাদের নিজেদের কাজে পারদর্শী করে তোলে।
সেজন্যই বোধহয় অভিনন্দনের সহকর্মীরা তাঁকে সিঙ্ঘম (সিংহ) বলে ডাকেন। আর সত্যিই তিনি সিংহই বটে।
