আগেই সতর্ক করছিলেন অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন ওপেনার ম্যাথু হেইডেন। বলেছিলেন, অস্ট্রেলিয়াকে হালকাভাবে নিও না বীরু। সেহওয়াগ কী হেইডেনের সেই সতর্কবার্তা শুনতে পেয়েছেন? না শুনতে পেলেও ক্ষতি নেই। বেঙ্গালুরুতে আজ গ্লেন ম্যাক্মওয়েল একাই বুঝিয়ে দিলেন অস্ট্রেলিয়াকে কোনো অবস্থাতেই হালকাভাবে নিতে নেই।
বিরাট কোহলির ৩৮ বলে ৭২ রানের অপরাজিত ইনিংসে ভর করে ভালো ব্যাটিংয়ের দায়িত্বটুকু সেরে রেখেছিল ভারত। স্কোরবোর্ডে উঠেছে ৪ উইকেটে ১৯০। তাড়া করতে নেমে ঝোড়ো শুরুর দরকার ছিল অস্ট্রেলিয়ার। পাওয়ার প্লে-র প্রথম ছয় ওভার শেষে তা হয়নি। ৪২ রান উঠলেও ততক্ষণে ফিরেছেন মার্কাস স্টয়নিস ও অ্যারন ফিঞ্চ। তৃতীয় ওভারে স্টয়নিসকে (৭) আউট করেন সিদ্ধার্থ কাউল। পরের ওভারে বিজয়কে উইকেট দেন অধিনায়ক ফিঞ্চ (৮)। চতুর্থ ওভারের মধ্যে ২২ রানে ২ উইকেট হারিয়ে শুরুতেই হোঁচট খেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া।
কিন্তু এখান থেকে অস্ট্রেলিয়াকে ম্যাচে ফিরিয়ে ৭ উইকেটের জয় ছিনিয়ে এনেছেন ম্যাক্সওয়েল। ৯ ছক্কা ও ৭ চারে তাঁর ৫৫ বলে ১১৩ রানের অপরাজিত ইনিংসে ভর করে দুই বল হাতে রেখেই সিরিজ জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। ভারতের মাটিতে এটাই প্রথম দ্বিপক্ষীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয় অস্ট্রেলিয়ার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভারতের নেতৃত্ব দিয়ে ঘরের মাঠে এই প্রথম সিরিজ হারলেন কোহলি। গত তিন বছরের মধ্যে তিন সংস্করণ মিলিয়ে ঘরের মাঠে এটাই প্রথম সিরিজ হার ভারতের।
ডি আর্চি শর্টকে নিয়ে তৃতীয় উইকেটে ৪৩ বলে ৭৩ রানের জুটি গড়েন ম্যাক্সওয়েল। ১২তম ওভারে শর্টকে (২৮ বলে ৪০) তুলে নেন বিজয়। ওই ওভার শেষে ৪৮ বলে ৮৩ রান দরকার ছিল অস্ট্রেলিয়ার। পিটার হ্যান্ডসকম্বকে নিয়ে জয়ের এই সমীকরণ ধীরে ধীরে সহজ করেছেন ম্যাক্সওয়েল। এই পথে ২৮ বলে তুলেছেন সিরিজে নিজের দ্বিতীয় ফিফটি। শেষ পাঁচ ওভারে জয়ের জন্য ৬০ রান দরকার ছিল অস্ট্রেলিয়ার। ১৬ ও ১৭তম ওভারে যথাক্রমে ১৬ ও ১২ রান তুলে শেষ তিন ওভারে জয়ের সমীকরণকে ৩২ রানে নামিয়ে আনেন ম্যাক্সওয়েল-হ্যান্ডসকম্ব জুটি।
সিরিজ জয়ের পথে ১৯তম ওভারে সেঞ্চুরিও তুলে নেন ম্যাক্সওয়েল। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এটি তাঁর তৃতীয় শতক। প্রথম অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে এই কীর্তি গড়লেন তিনি। জয়ের জন্য শেষ ওভারে ৯ রান দরকার ছিল অস্ট্রেলিয়ার। চতুর্থ বলের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার ৭ উইকেটের জয় নিশ্চিত করে ম্যাক্সওয়েল। অন্য প্রান্তে ১৮ বলে ২০ রানে অপরাজিত ছিলেন হ্যান্ডসকম্ব।
গত ম্যাচের ব্যর্থতা ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে ধুয়ে মুছে ফেলার চেষ্টা করেন বিরাট কোহলি। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর অধিনায়ক হওয়ায় চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম কোহলির সেকেন্ড হোম গ্রাউন্ড। বুধবার দ্বিতীয় টি-২০ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অধিনায়কোচিত ইনিংস খেললেন কোহলি। কার্যত তাঁর ব্যাটিংয় তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার বোলিং। কিন্তু তাঁর লড়াই বৃথা যায় বোলারদের ব্যর্থতায়।
আচমকাই ভারতের তিন উইকেট পড়ে যায়। একে একে ফিরে যান লোকেশ রাহুল, শিখর ধাওয়ান ও ঋষভ পন্থ। রান রেট তখন সাতের নীচে। একদিনের সিরিজ বাঁচানোর লড়াই। অন্যদিকে নিজেকে প্রমাণ করার চ্যালেঞ্জ। জোড়া চাপ উপেক্ষা করে অনবদ্য ব্যাটিং করে ভারতকে ১৯০ রানে পৌঁছে দেন বিরাট। তিনি ছক্কার হ্যাটট্রিক করেছেন কুল্টার নাইলের বিরুদ্ধে। মহেন্দ্র সিং ধোনির সঙ্গে যোগ করেছেন ১০০ রান। ২৯ বলে অর্ধশতরান পূর্ণ করেন কোহলি। ফর্মে ছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনিও। তিনি কোহলিকে পাশে পেয়ে সাহসী শট খেলেছেন। ১৮তম ওভারে মাহি দু’টি ছক্কা ও একটি চার হাঁকান। ভারতের রান রেট দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকে। ২৩ বলে ৪০ রান করে আউট হন ধোনি। তাঁর ইনিংসে রয়েছে তিনটি চার ও তিনটি ছক্কা। তিন বল খেলে দু’টি বাউন্ডারির সাহায্যে ৮ রান করেন দীনেশ কার্তিক। ৩৮ বলে ৭২ রানে অপরাজিত থাকেন বিরাট। তাঁর ইনিংসটি সাজানো রয়েছে ছ’টি ওভার বাউন্ডারি ও দু’টি বাউন্ডারিতে।
ভারতীয় দলে এদিন তিনটি পরিবর্তন হয়। রহিত শর্মার জায়গায় খেলেন শিখর ধাওয়ান। পেসার উমেশ যাদবের জায়গায় খেলানো হয় সিদ্ধার্থ কল ও মায়াঙ্ক মারকাণ্ডের পরিবর্তে প্রথম একাদশে সুযোগ পান বিজয় শঙ্কর। ওপেনিং জুটিতে লোকেশ রাহুল ও শিখর ধাওয়ান ৬১ রান যোগ করেন। গত ম্যাচে হাফ-সেঞ্চুরি করে আত্মবিশ্বাস অনেকটাই বাড়িয়ে নিয়েছিলেন লোকেশ। এদিন শুরু থেকেই তিনি ছন্দে ছিলেন। তবে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে লোকেশ আউট হন ৪৭ রানে। অসাধারণ বেশ কয়েকটি শট নিয়েছেন তিনি। চারটি ওভার বাউন্ডারি ও তিনটি বাউন্ডারি রয়েছে তাঁর ইনিংসে। বেহরেনডর্ফের বলে মার্কাস স্টোইনিসের হাতে ধরা পড়েন শিখর। তবে স্টোইনিসের হাতে বল জমা পড়ার আগে মাটি স্পর্শ করেছিল বলে রিপ্লে দেখে মনে হয়। কিন্তু আম্পায়ার শিখরকে (১৪) আউট দিয়ে দেন। গত ম্যাচের মতো এদিনও হতাশ করেন ঋষভ পন্থ (১)।