গতকাল পাকিস্তানের এফ-১৬ বিমান ভারতীয় বায়ুসীমা লঙ্ঘন করে ভারতে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। ভারতীয় যুদ্ধবিমান মিগ-২১-এর পাইলট আকাশ পথে পাকিস্তানের হামলা মোকাবিলা করতে গিয়ে পাকিস্তানের হাতে বন্দি হয়েছেন বলে বুধবার বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে মেনে নেওয়া হয়। পাকিস্তানের হাতে ধৃত পাইলটকে নিয়ে চিন্তিত দিল্লীর কর্তারা। কার্গিল যুদ্ধের সময়ও পাকিস্তানের হাতে ধরা পড়ে গিয়েছিলেন ভারতীয় বায়ুসেনার দু’জন পাইলট। তাঁদের মুক্তি নিয়ে এক জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে ভারতীয় সীমায় ঢুকে পড়লেও স্কোয়াড্রন লিডার অজয় আহুজাকে আটক করে পাক সেনা । তারপর তাঁকে খুন করা হয়। কিন্তু কূটনৈতিক পরিস্থিতির চাপে পড়ে আরেক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নচিকেতাকে ভারতের হাতে তুলে দেয় পাকিস্তান। কিন্তু এবার অভিনন্দনকে নিয়ে কি ভাবছে পাকিস্তান সেদিকে তাকিয়ে গোটা ভারতের মানুষ।
১৯৯৯ সালের ২৭ মে। কার্গিল যুদ্ধের সময় তখন বাটালিক সেক্টরে শত্রু সেনাদের অবস্থান জানবার জন্য পাঠানো হয় স্কোয়াড্রন লিডার অজয় আহুজাকে কিন্তু মাঝ আকাশে থাকা অবস্থায় তাঁকে জানানো হয় বিমানে ত্রুটি ধরা পড়ায় ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট কে নচিকেতা অবতরণে বাধ্য হয়েছেন। তখনই অজয় আহুজা সিদ্ধান্ত নেন আগে নচিকেতাকে উদ্ধার করা হবে। ভারতীয় যুদ্ধবিমান লক্ষ্য করে তখন অবিরত ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ছে পাক সেনা। এই অবস্থায় তাঁর সঙ্গে থাকা আর একটি বিমানকে ভারতে ফিরে আসার নির্দেশ দেন তিনি। আর নিজে আকাশপথে নচিকেতার তল্লাশি করেন। নচিকেতার বিমানের ধ্বংসাবশেষের খোঁজও পান আহুজা। সেখানে অবতরণের সময় পাক ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত লাগে তাঁর বিমানে। বিমানটিকে নিরাপদ জায়গায় অবতরণের জন্য নিয়ে যেতে গেলে তাঁর বিমানের ইঞ্জিনে আগুন লেগে যায়।
ভারতীয় বায়ুসেনার তথ্য থেকে জানা যায়, আহুজার শেষ অবস্থান ছিল নিয়ন্ত্রণ রেখার ভারতীয় দিকেই। কিন্তু তিনি পাক সেনার হাতে বন্দি হন। ২৮ মে তাঁর দেহ ভারতের হাতে তুলে দেয় পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ। ইসলামাবাদ জানায়, অবতরণের সময় বাঁ পায়ে গুরুতর আঘাত লেগেছিল আহুজার। তাতেই নাকি মৃত্যু হয়েছে তাঁর। পরে আহুজার দেহের ময়না তদন্ত থেকে জানা যায়, তাঁকে ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে খুন করা হয়েছে। ২৮ মে তাঁর মরদেহ ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ১৯৯৯ সালের ১৫ আগস্ট মরণোত্তর বীর চক্র সম্মানে ভূষিত করা হয় বীর অজয় আহুজাকে।
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট কে নচিকেতা যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ায় অধিকৃত কাশ্মীরে বিমান অবতরণে বাধ্য হয়েছিলেন। আটদিন ধরে তিনি পাকিস্তানে ছিলেন। তাঁকে ফেরাতে কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা শুরু করে নয়াদিল্লি। চাপে পড়ে তাঁকে রেড ক্রসের হাতে তুলে দেয় পাকিস্তান।
জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী, কোনো যুদ্ধবন্দীদের কোনোভাবেই কোনো শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করা যাবে না। তাঁদের যোগ্য সম্মান দিতে হবে। যুদ্ধবন্দীকে তাঁর নিজদেশে প্রত্যার্পন করতে হবে। অজয় আহুজা ও নচিকেতাকে দেশে ফেরাবার সময় ওই দুঃখজনক ঘটনা ঘটলেও অভিনন্দনকে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ঘটনার অপেক্ষায় গোটা দেশবাসী।