কেন্দ্র থেকে মোদী সরকারকে উৎখাত করতে বাংলায় ৪২টি লোকসভা আসনের ৪২টিতেই জয়ের ডাক দিয়ে রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার নজরুল মঞ্চের কমিটির বৈঠকে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে আরও একবার সেই বার্তা দিলেন তিনি। সেইসঙ্গে ইভিএম কারচুপি করে লোকসভা ভোটে রাজ্যে বিজেপি ২২-২৩টি আসন পেতে চাইছে বলেও অভিযোগ করেন মমতা। ভোট মেশিনে কারচুপি করতে বিজেপি কোম্পানি লাগিয়েছে বলে অভিযোগ করে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘ওরা যে বলছে বাইশটা পাব, চব্বিশটা পাব, এই জন্যই বলছে।’
প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী ৪২টি আসন পাওয়ার কথা বললেও বিজেপি এ রাজ্যে দলের লক্ষ্য হিসাবে বারবারই ২২-২৩ টি আসনের কথা বলেছে। গতকাল এক বৈদুতিন সংবাদ মাধ্যমে বাংলায় রাজনৈতিক পরিবর্তন হবে বলে দাবি করে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ রাজ্যে বিজেপির লক্ষ্য হিসাবে ২৩ টি আসনের কথা বলেছিলেন। তারপরেই নজরুল মঞ্চের সভা থেকে বিজেপির উদ্দেশ্যে তোপ দেগে মমতা বলেন, ‘ইভিএমে কারচুপি করবে। বাংলায় এটা করার চেষ্টা চলছে। তাই বলছে, ২৩-২৪টা আসন পাবে।’ তবে এসব ঠেকাতে যে তৃণমূল প্রস্তুত সে কথা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিতে তিনি বলেন, ‘ভাল করে করাব।’
ইভিএম নিয়ে নিজের আশঙ্কার কথা জানিয়ে গতকাল দলের তরফে সতর্কতা অবলম্বনের কথাও উল্লেখ করেন তৃণমূল নেত্রী। দলের নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘যাঁরা ইভিএম এবং ভি-প্যাড সম্পর্কে জানেন, তাঁদেরই দলের তরফে বুথে পাঠাবেন।’ আর যাঁরা জানেন না, তাঁদের জন্য তিনি আলাদা প্রশিক্ষণের দায়িত্ব দিয়েছেন সৌগত রায়, দীনেশ ত্রিবেদী ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। দলের নীচেরতলার নেতা-কর্মীদের এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেবেন তাঁরা। দলের প্রার্থী বাছার প্রসঙ্গেও মমতা সাফ জানিয়ে দেন, ‘যাঁরা ভাল কাজ করেছেন, তাঁরা থাকবেন। দু’একজনের সমস্যা আছে। তাঁদের সঙ্গে কথা বলা হবে। তবে দল যাঁকে প্রার্থী করবে, তাঁর হয়েই নির্বাচন করতে হবে।’
বিজেপি টাকার প্রলোভন দেখিয়ে তৃণমূলকে ভাঙার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেন তৃণমূল নেত্রী। তাই লোকসভা ভোটে দলকে পূর্ণশক্তিতে মাঠে নামার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘রাজ্যে কংগ্রেস, সিপিএম কী করে তা দেখার দরকার নেই। পঞ্চায়েতে যা দেখার দেখে নিয়েছি।’ এরপরই নিজের চেনা ঢঙে দলকে চাঙ্গা করতে তিনি বলেন, ‘৩৪ বছর লড়াই করে সিপিএমকে যদি সরাতে পারি, তাহলে পাঁচ বছরের মোদী নামের স্বৈরাচারীকেও সরাবই সরাব। আগের মতো জেগে উঠুন তো।’
রাজ্যে আরএসএস-এর উত্থান নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন মমতা। বলেন, ‘নানা ভাবে গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করছে আরএসএস ও বিজেপি। সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরির চেষ্টা করছে ওরা। কাউকে বোরখা পরে কোনও মহল্লায় ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর রটানো হচ্ছে ছেলেধরার গুজব। এর ফলে বেশ কিছু জায়গায় আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে’। এমন কোনও ঘটনা নজরে এলে সংযত থেকে পুলিশকে খবর দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।