আজ ভারতের সাফল্যের দিন, গর্বের দিন। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পাক মদত পুষ্ট জইশ জঙ্গীর আত্মঘাতী বিস্ফোরণে রক্তাক্ত হয়েছিল পুলওয়ামা। শহীদ হয়েছিলেন ৪৪ জন জওয়ান। আজ বায়ুসেনা সেই বদলা নিল। ভোরবেলা পাক অধিকৃত কাশ্মীরে নির্দ্বিধায় ঢুকে পড়ল ভারতীয় বায়ুসেনার ১২টি অত্যাধুনিক মিরাজ-২০০০ যুদ্ধবিমান। কিন্তু কেন এই বিমানটিই ব্যবহার করল ভারত? কী এর বিশেষত্ব?
১৯৮৫ সালে ভারতীয় বায়ুসেনায় যুক্ত এই যুদ্ধবিমান। এখনও পর্যন্ত একেই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বলে মান্যতা দেওয়া হয় বায়ুসেনার তরফে। বিমানটি ফ্রান্সের বায়ুসেনার জন্য তৈরি করে দাসাল্ট নামের অস্ত্র নির্মাণকারী সংস্থা। তারপর দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে ভারতের হাতে আসে বিমানটি। এই সংস্থাটির কাছ থেকেই ৩৬টি রাফালে যুদ্ধবিমানও কিনেছে ভারত। মূলত বোমারু বিমান হিসেবেই কাজ করে মিরাজ-২০০০। শত্রু দেশের রাডারকে ফাঁকি দিয়ে তাদের বায়ুসীমায় প্রবেশ করে বোমাবর্ষণে, এর জুড়ি মেলা ভার। এপর্যন্ত প্রায় ৬০০টি মিরাজ বিশ্বের ন’টি দেশের বায়ুসেনার হাতে রয়েছে। মিরাজ বিশ্বের কয়েকটি বৃহদাকৃতি যুদ্ধবিমানের অন্যতম। প্রত্যেকটি বিমান বহনক্ষমতা অনেক বেশি ও ‘টপ অফ দ্য লাইন আর্টিলারি’ বহন করতে পারে। এই বিমানগুলির সর্বোচ্চ গতি ২,০০০ কিমি/ঘণ্টা। মিরাজের কম্ব্যাট ওয়েট: ২১,০০০ পাউন্ড এবং এর আভ্যন্তরীণ অস্ত্র: ২.৩৩ মিমি বন্দুক।
এই মুহূর্তে ভারতের হাতে রয়েছে প্রায় ৪০টি মিরাজ যুদ্ধবিমান। সাতের দশকে তৈরি হলেও সদ্য আপগ্রেড করা হয়েছে যুদ্ধবিমানগুলিকে। ফলে আরও ঘাতক হয়ে উঠেছে মিরাজ। প্রায় ৫ হাজার ৯০০ কিলোগ্রাম ওজনের অস্ত্রশস্ত্র ও বোমা নিয়ে উড়তে সক্ষম এই বিমানটি। শত্রুর জঙ্গিবিমানকে মাঝ আকাশে ধবংস করতে এতে রয়েছে ‘অটো ক্যানন’ বা কামান। পাশাপাশি রকেট থেকে শুরু করে লেজার গাইডেড বম্ব বহন করতে পারে বিমানটি।
নিখুঁতভাবে আকাশে অনেক উঁচু থেকেই শত্রুর শিবিরে আছড়ে পরে লেজার রশ্মি নিয়ন্ত্রিত বোমাগুলি। প্রায় ১৫০ কিলোমিটারের রেডিয়াসে হামলা চালাতে সক্ষম মিরাজ। সব থেকে বড় কথা আণবিক বোমা বহনে সক্ষম এটি। এছাড়াও যেকোনও আবহাওয়ায় ও রাতে হামলা চালাতে পারে মিরাজ। সিঙ্গল ইঞ্জিন বিশিষ্ট বিমানটির ককপিটও সম্প্রতি অত্যাধুনিক করে তোলা হয়েছে। হেলমেটের কাচেই বোমবর্ষণ থেকে শুরু করে সমস্ত তথ্য পেয়ে যান পাইলট। এছাড়াও শুধুমাত্র মাথা ঘুরিয়েই মিসাইলগুলিকে অন্য জঙ্গিবিমানের দিকে চুঁড়তে পারেন পাইলট। এতে রয়েছে ‘থেইলস রাডার’। এর ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অস্ত্রের নিশানায় চলে আসে শত্রু পক্ষের বিমান ও মিসাইল। এই যুদ্ধবিমান লেজার গাইডেড বোমা ফেলতে সক্ষম। সেই কারণেই সবাইকে পিছনে ফেলে কারগিলের পর এবারও বায়ুসেনার ভরসা হয়ে উঠল মিরাজ।