আধা সামরিক বাহিনীর গাড়িতে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গী গোষ্ঠীর আত্মঘাতী বিস্ফোরণের পর, ঠিক ১২ দিনের মাথায় এবার পাল্টা দিল ভারত। আর চুপ করে বসে না থেকে পুলওয়ামার জবাব হিসেবে নিয়ন্ত্রণ রেখার ওপারে পাকিস্তানের ভূখন্ডে থাকা একের পর এক জঙ্গী ঘাঁটি উড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় বায়ু সেনা। সেনা সূত্রে খবর, মঙ্গলবার ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ এই স্ট্রাইক শুরু করে। সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, যে উদ্দেশ্য নিয়ে স্ট্রাইক করেছিল ভারত তাতে পুরোপুরি সফল।
জানা গেছে, বালাকোট থেকে পাক অধ্যুষিত কাশ্মীরের প্রায় ৮০ কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে পরে ভারতীয় বায়ুসেনার ১২টি যুদ্ধবিমান। এরপরই কালবিলম্ব না করে বায়ুসেনার ওই ১২টি মিরাজ-২০০০ যুদ্ধবিমান কার্পেট বম্বিং শুরু করে। প্রায় এক হাজার কিলো বোমা বর্ষণ করা হয় জঙ্গী ক্যাম্পগুলির ওপর। গুঁড়িয়ে দেওয়া একের পর এক জইশ-ই-মহম্মদের লঞ্চপ্যাড। মাসুদ আজহারের সংগঠনের কন্ট্রোল রুম আলফা-৩ ও ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকেল সওয়া তিনটে নাগাদ কাশ্মীরের পুলওয়ামায় ভয়াবহ জঙ্গী হামলা চালিয়েছিল পাক মদতপুষ্ট জইশ-ই-মহম্মদ। প্রাণ গিয়েছিল ৪৪ জন সিআরপিএফ জওয়ানের। সেই শোকের মাঝেই সেনা জানিয়েছিল বাবলু সাঁতরা, সুদীপ বিশ্বাসদের হত্যার বদলা নেওয়া হবেই। এবং তা খুব শিগগির। হলোও তাই। ১২ দিনের মাথায় পাকিস্তানকে উপযুক্ত জবাব দিল ভারত।
প্রসঙ্গত, পুলওয়ামা কাণ্ডের পর ফুঁসছিল ভারত। পৃথিবীর একাধিক দেশ সমালোচনাও করেছে পাকিস্তানের। রাষ্ট্রসঙ্ঘেও কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল ইমরান খানের পাকিস্তান। ঘটনার কয়েক দিন পর এক রকম চাপে পড়েই সাংবাদিক সম্মেলন করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সেখানে নিজের দেশের সাফাই গেয়ে ইমরান বলেন, নয়াদিল্লী যদি প্রমাণ দিতে পারে তাহলে অবশ্যই পাক প্রশাসন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। আর ভারত যদি বদলা নিতে চায়৷ তাহলে পাল্টা আক্রমণ করবে ইসলামাবাদ।
ইমরানের ওই কথা শেষ হওয়ার পরপরই নর্থ ব্লক জানিয়ে দেয়, জইশ-এর মাথা মাসুদ আজহার পাকিস্তান অধ্যুষিত পাঞ্জাবের ভাওয়ালপুরে বসে রয়েছে। যান গিয়ে ধরুন। তারপর চাপে পড়ে পাকিস্তান জানায় ভাওয়ালপুরের জইশ হেড কোয়ার্টারসের দখল তাদের সেনাবাহিনী নিয়ে ফেলেছে। কিন্তু তার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই পাল্টি খায় পাকিস্তান। জানায়, ওখানে মাদ্রাসা রয়েছে। পড়াশোনা হয়। ওখানকার সঙ্গে জঙ্গী সংগঠনের কোনও যোগ নেই।
এরপরই হামলার সিদ্ধান্ত নেয় সেনা। বায়ুসেনা সূত্রে জানা যাচ্ছে, ইসলামাবাদ টের পাওয়ার আগেই প্রত্যাঘাত করে ভারত। তবে পাকিস্তানের দিক থেকে সম্ভাব্য পাল্টা আক্রমণ ঠেকানোরও প্রস্তুতি সমান্তরাল ভাবে রাখা হয়েছিল। ১২ টি মিরাজ বিমান যখন বালাকোটে হামলা চালাচ্ছে, তখন নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর উড়ান শুরু করে দেয় ভারতীয় সেনা বাহিনীর এয়ারবর্ন আর্লি ওয়ার্নিং এয়ারক্রাফ্ট। তা ছাড়া একটি সি-১৭ গ্লোবমাস্টার ও একটি এন-৩২ বিমানে সেনা জওয়ানও মজুত রাখা হয়েছিল নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর। দু’টি বিমানে মিলিয়ে ১৯০ কম্যান্ডোকে ‘ব্যাটল রেডি’ রাখা হয়েছিল সম্ভাব্য অপারেশনের জন্য।