গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মীরের পুলওয়ামায় হওয়া জঙ্গী হামলার ঘটনা নিয়ে প্রথম থেকেই উঠছে নানা প্রশ্ন। খোদ প্রাক্তন র কর্তা বিক্রম সুদও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, নিরাপত্তার গাফিলতি না থাকলে এমন ঘটনা ঘটতেই পারেনা। আর এবার সিআরপিএফ-এর অর্ন্ততদন্ত রিপোর্ট ঘিরেও তৈরি হয়েছে প্রচুর প্রশ্ন৷
সূত্রের খবর, সিআরপিএফ কর্তারা জঙ্গী হামলার ঘটনা নিয়ে যে তদন্ত করেছেন, তাতে দেখা গিয়েছে যে ১৪ ফেব্রুয়ারি দুপুরে জম্মু-শ্রীনগর ন্যাশনাল হাইওয়েতে সিআরপিএফ-র ৭০টির বেশি গাড়ির কনভয়ে থাকা আধা সেনা বোঝাই দুটি বাস একইসঙ্গে খারাপ হয়ে গিয়েছিল৷ এই বাসগুলি ছিল সামনের দিকে৷ ফলে পিছনের দিকে কনভয়ের অধিকাংশ গাড়ি আটকা পড়ে যায় মাঝপথেই৷
প্রায় ২০ মিনিট সময় ধরে কনভয়ের গাড়িগুলি থেমে ছিল৷ আর সেই ২০ মিনিটই হয়ে দাঁড়ায় ঘাতক৷ এই সময়ের মধ্যেই বিস্ফোরক বোঝাই স্করপিও নিয়ে সিআরপিএফ কনভয়ের মাঝখানে থাকা বাসে আঘাত হেনেছিল জৈশ-র আত্মঘাতী জঙ্গী আদিল৷ সিআরপিএফ কনভয়ের গাড়িগুলি থেমে থাকায় জঙ্গী আদিলের পক্ষে ‘টার্গেট হিট’ করা অনেক বেশি সহজ হয়েছিল বলে মনে করছেন আধা সেনা কর্তারাই৷
প্রশ্ন উঠছে কনভয়ে থাকা গাড়িগুলির ছাদে নিরাপত্তা রক্ষী থাকার বিষয়টি নিয়ে৷ সেনা ও আধা সেনার নিয়ম অনুযায়ী যখনই কোনও বড় কনভয় যাওয়া আসা করে, তখন সেই কনভয়ে থাকা গাড়িগুলির নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য কনভয়ের ভিতরে থাকা গাড়িগুলির ছাদে সশস্ত্র নিরাপত্তা রক্ষী মোতায়েন করা হয়ে থাকে৷ এই নিরাপত্তা রক্ষীরাই চারপাশে সতর্ক দৃষ্টি রাখেন এবং প্রয়োজনে ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকেন৷ এক্ষেত্রে এই নিয়ম কঠোর ভাবে পালন করা হয়নি বলে সিআরপিএফ সূত্রে জানা গিয়েছে৷
এর পাশাপাশি আরও একটি বিষয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সিআরপিএফ অন্তর্তদন্তে৷ প্রচন্ড তুষারপাতের জন্য একটানা কয়েকদিন জম্মু-শ্রীনগর ন্যাশনাল হাইওয়ে বন্ধ থাকার পরে যেদিন হাইওয়ে খুলল, সেদিনই কেন একসঙ্গে প্রায় আড়াই হাজার আধা সেনার কনভয় রওনা করা হল? রাস্তা খোলার পরে ভালো ভাবে তা পরীক্ষা না করেই কেন সেনাদের মুভমেন্টের অনুমতি দেওয়া হল? এই প্রশ্নটিও উঠে এসেছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কর্তাদের সামনে৷
জওয়ানদের কনভয়ে কম গাড়ি থাকলে রিস্ক ফ্যাক্টর কম হয় বলেই মনে করেন সেনা কর্তারা৷ সেনার স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর বা এসওপিতে উল্লিখিত আছে কনভয়ের গাড়ির সংখ্যা কোনওভাবেই ২৫-৩০টির বেশি হবে না। এবং একটি গাড়ির সঙ্গে অন্য গাড়ির নূন্যতম ২০ ফুট দূরত্ব থাকবে৷ সেনার এই এসওপি মানে না সিআরপিএফ৷ জঙ্গী হামলার দিনে তাদের কনভয়ে ছিল ৭৮টি গাড়ি, যাতে জম্মু থেকে শ্রীনগর যাচ্ছিলেন ২৫৪৭ জন জওয়ান৷ এর আগে ৪ ফেব্রুয়ারি সিআরপিএফ কনভয়ে ছিল ৯১টি গাড়ি, যার মাধ্যমে ২৮৭১ জন আধা সেনা শ্রীনগর গিয়েছিলেন৷