রবিবার মাঝরাত থেকে শুরু হওয়া ঝড়ের দাপটে কার্যত লণ্ডভণ্ড কলকাতা ও তার সংলগ্ন এলাকা। দক্ষিণবঙ্গ-সহ পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম ও বীরভূমের নানা জায়গায় দেখা গেছে ঝড়ের দাপট। আর তারপর থেকেই শোনা গেল একের পর এক মৃত্যুর খবর। কালবৈশাখীর দাপটে রাজ্যে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ৪।
কালবৈশাখীর ঝড়ে প্যান্ডেল ভেঙে পড়ে পুরুলিয়ার মানবাজার ২ নম্বর ব্লকের বোরো গ্রামে মৃত্যু হয়েছে প্রদীপ তন্তবায় নামে এক ব্যক্তির। জানা গিয়েছে, গৃহপ্রবেশের অনুষ্ঠান ছিল বাড়িতে। ছাদে বাঁধা হয়েছিল প্যান্ডেল। গৃহপ্রবেশ উপলক্ষে বাড়িতে অতিথি অভ্যাগতদের ভিড় ছিল। গৃহপ্রবেশের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছিলেন সবাই। এমন সময়ই দুর্ঘটনাটি ঘটে। ঝড় বৃষ্টির জেরে ভেঙে পড়ে ছাদের প্যান্ডেল। মৃত্যু হয় প্রদীপ তন্তুবায় নামে এক ব্যক্তির। অন্যদিকে কেশপুরের নেরাদেউলে বাজ পড়ে মৃত্যু হয়েছে আরও এক ব্যক্তির। মৃতের নাম হাবিবুল শেখ।
কালবৈশাখীর ঝড়বৃষ্টির সময় বাজ পড়ে মৃত্যু হল এক কিশোরীর। মতৃার নাম তরুণী মল্লিকা নস্কর। বয়স ১৬ বছর। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরের কুরালি গ্রামের বাসিন্দা মল্লিকা এবছরই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন ভোর ৪টে নাগাদ মল্লিকাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলে তার জ্যেঠু ও জ্যেঠিমা। জ্যেঠিমা মল্লিকাকে বলে, বাইরে তুমুল বৃষ্টি নেমেছে। উঠোনে ধান রয়েছে। সেগুলো তুলতে হবে। জ্যেঠু-জ্যেঠির ডাকে ঘুম থেকে উঠে পড়ে কিশোরী মল্লিকা। জ্যেঠু-জ্যেঠি উঠোন থেকে ধান তুলতে গেলে, সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আলো দেখাতে থাকে তাঁদের। এমন সময়ই প্রবল জোরে একটি বাজ পড়ে। মল্লিকাদের বাড়ির টালির চাল ভেদ করে বিদ্যুত সোজা এসে পড়ে কিশোরীর উপর।
এই ঝড়ের ফলেই লঞ্চ থেকে পড়ে মারা গেলেন এক যুবক। পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড় থেকে সুন্দরবনে বেড়াতে এসেছিলেন অভিষেক পন্ডা(২১)নামে এক তরুণ। সঙ্গে ছিলেন তাঁর আরও ৫ বন্ধু। সোমবার সকালে ঝড়খালি যাচ্ছিলেন অভিষেক ও তাঁর বন্ধুবান্ধবরা। প্রবল ঝড়ের মধ্যে তাঁরা নামতে যান ঝড়খালি ঘাটে। এর মধ্যেই আচমকা অভিষেক জলে পড়ে যান। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
অন্যদিকে কালবৈশাখীর জেরে বিপর্যস্ত হাওড়া এবং শিয়ালদহ ডিভিশনের ট্রেন চলাচল। ফলে চূড়ান্ত দুর্ভোগের শিকার হন যাত্রীরা। রবিবার রাতেই পশ্চিমবঙ্গে জোড়া কালবৈশাখী আছড়ে পড়ে। ফলে রবিবার গভীর রাত থেকেই কোথাও ওভারহেড তার ছিঁড়ে যায়। কোথাও ট্রেন লাইনের উপর গাছ উপড়ে পড়ে। সব মিলিয়ে শিয়ালদহ ডিভিশনে ১০২টি ট্রেন দেরিতে ছাড়ে। বাতিল করতে হয় ছ’টি ট্রেন। হাওড়া ডিভিশনে কোনও ট্রেন বাতিল করতে না হলেও আটটি লোকাল ট্রেন দেরিতে ছাড়ে। এই দুর্যোগ আরও ৪৮ ঘণ্টা চলবে এমনটাই জানিয়েছেন আবহাওয়া দফতরের আধিকারিকেরা।