আগাম আভাস ছিল আগে থেকেই। সেটাই সত্যি হল। সোমবার ভোর থেকেই প্রবল ঝড়বৃষ্টিতে তুলকালাম কলকাতায়। পশ্চিমি ঝঞ্ঝার প্রভাব ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় আছড়ে পড়ল প্রবল ঝড়। সঙ্গে তুমুল বৃষ্টি। আবহাওয়া অফিস থেকে আরও জানানো হয়েছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় পশ্চিমি ঝঞ্ঝার প্রভাবে আকাশ মেঘলা থাকবে, সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া-সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ঠাণ্ডা হাওয়ায় তাপমাত্রার পারদ কমেছে প্রায় পাঁচ ডিগ্রি।
রবিবার রাত ৩টে ৩০মিনিট থেকে শুরু হয় ঝড়ের তাণ্ডব। ঘণ্টায় ৪৪ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে শিলাবৃষ্টির জেরে রাজপথ ঢেকে যায় সাদা চাদরে। ফের ভোর সাড়ে চারটে থেকে ঘণ্টায় ৫৬ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যায় শহরের উপর দিয়ে। শুধু কলকাতা নয়, গতকাল রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে গোটা রাজ্যেই। দক্ষিণবঙ্গের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গেও এর প্রভাব পড়েছে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, পশ্চিমী ঝঞ্ঝার সঙ্গে পূবালী হাওয়ার সংঘাতের কারণেই রাজ্য জুড়ে এই ঝড়-বৃষ্টির তাণ্ডব। বজ্রগর্ভ মেঘের সঞ্চার হয় গতকাল মাঝরাত থেকেই। তবে এর রেশ থাকতে পারে আরও দুই থেকে তিন দিন। হাওয়া অফিস সূত্রে খবর, উত্তর ভারত থেকে পশ্চিমী ঝঞ্ঝা ক্রমশ এগিয়ে আসছে রাজ্যের দিকে। তার জেরে সোমবার থেকে তিন দিন বৃষ্টি হতে পারে। বৃহস্পতিবার থেকে কমতে পারে বৃষ্টি। সেই সঙ্গে আকাশ মেঘলা থাকবে, পাল্লা দিয়ে চলবে ঝোড়ো হাওয়ার দাপট। সোমবার পাঁচ ডিগ্রি কমে তাপমাত্রা দাঁড়িয়েছে ১৬.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
ফেব্রুয়ারির শেষে, অন্য বারের মতোই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছেছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আশঙ্কা করা হচ্ছিল, এখনই এমন হলে গরম আরও কত বাড়বে। কিন্তু সেই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বাড়তে থাকার আগেই কালবৈশাখীর পূর্বাভাস জারি করেছিলেন আবহবিদরা। রবিবার রাতে মিলে গেল সেই পূর্বাভাস। কলকাতার পাশাপাশি ঝড়ের দাপট দেখা গেছে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম ও বীরভূমের নানা জায়গায়। দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, নদিয়াতেও প্রবল ঝড়বৃষ্টি হয়েছে বলে খবর।
রাতভর ঝড়-বৃষ্টির জেরে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে কলকাতা । কোথাও গাছ উপড়ে রাস্তা আটকে গিয়েছে। কোথাও বিদ্যুতের পোস্ট, হোর্ডিং, ফেস্টুন পড়ে রয়েছে রাস্তার মাঝে। যার জেরে যান চলাচল থমকে গিয়েছে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে। সপ্তাহের প্রথম দিন বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র যানজটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ, বাইপাস থেকে গড়িয়া সর্বত্রই একই চিত্র। সল্টলেক, এয়ারপোর্ট এলাকাতেও ঝড়ের দাপটে গাছ উপড়ে রাস্তা আটকে গিয়েছে। কলকাতা পুলিশ, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, পুরসভার কর্মীরা রাস্তা থেকে গাছ সরানোর কাজ শুরু করেছেন।