পুলওয়ামা হামলার পর থেকেই ‘গা-গরম’ করা বক্তৃতা দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পাকিস্তানের ‘নাম ও নিশান’ মিটিয়ে দেওয়ার তোড়জোড় হচ্ছে বিজেপির পক্ষ থেকে। কিন্তু আত্মঘাতী জঙ্গী হামলার পর ৭ দিন খোদ মোদী কী করছিলেন? কখনও শুটিং, কখনও নির্বাচনী প্রচার, কখনও বা সৌদি যুবরাজকে আলিঙ্গন।
১৪ ফেব্রুয়ারি সারা দেশ যখন শহীদ জওয়ানদের স্মৃতিতে শোক বিহ্বল তখন নরেন্দ্র মোদী করবেট পার্কে শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন। ভয়াবহ জঙ্গী হামলার পরেও বন্ধ হয়নি তাঁর ক্যামেরা। যখন সারা দেশ প্রশ্ন তুলল, কেন এমন করলেন মোদী? তখন পিঠ বাঁচাতে সরকার পক্ষ সাফাই দিল, নেটওয়ার্কের দোষেই মোদীর কাছে খবর পৌঁছয়নি।
অবশ্য জঙ্গী হামলার খবর পৌঁছনোর পরেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে খুব একটা ভাবান্তর দেখা যায়নি। হামলার পরের দিন তিনি হাসতে হাসতে ‘বন্দে ভারত এক্সপ্রেস’ ট্রেনের উদ্বোধনে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। সেই বন্দে ভারত ট্রেন গরুর ধাক্কায় মুখ থুবড়ে পড়ল। দেশবাসী হাসাহাসি শুরু করল। তাতে আরও ক্ষেপে গেলেন মোদী। বলে দিলেন, এই ট্রেন ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারদের তৈরি। তাই এই ট্রেন নিয়ে কোনও রসিকতা তিনি বরদাস্ত করবেন না। শিব ঠাকুরের আপন দেশে আইন কানুন সর্বনেশ, ছাড়া আর কী!
সারা দেশ তখন শহীদ জওয়ানদের স্মৃতিতে মোমবাতি মিছিল করছেন। নাওয়া-খাওয়া ভুলে গেছেন। ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন পাকিস্তানের ওপর। তখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাষ্ট্রীয় শোক প্রকাশ করেননি, নিজের নির্বাচনী প্রচার বন্ধ রাখেননি। উল্টে জোরকদমে প্রচার চালিয়েছেন। যে রাগ আর আক্রোশ জঙ্গীদের ওপর জমা হয়েছে, তা ভোট বাক্সে তোলার কৌশলী প্রয়াস চালিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছেন লাগাতার। গেছেন মহারাষ্ট্র, বিহার, ঝাড়খণ্ড, বারানসিতে। ‘যুদ্ধ যুদ্ধ’ হাওয়া তৈরি করেছেন।
পুলওয়ামা হামলার ঠিক পরেই সৌদি যুবরাজ প্রিন্স মহম্মদ বিন সলমান গিয়েছিলেন পাকিস্তানে। অর্থ সাহায্য করে এসেছেন ইমরান খানের দেশকে। তারপরেই পা রেখেছেন ভারতে। পাকিস্তানকে ‘মুছে’ দিতে চাওয়া মোদী সাদর অভ্যর্থনা জানিয়েছেন যুবরাজকে। প্রটোকল ভেঙে জড়িয়ে ধরেছেন যুবরাজকে। যে ‘হিংসা’র কথা তিনি বলছিলেন, যুবরাজকে দেখেই তা উধাও। মোদীর এমন আচরনের নিন্দা করেছে সারা দেশ। মোদী সেসবে কান দেননি। যেমন দেননি অন্যান্য সময়েও।
এমন আচরণের জন্য আন্তর্জাতিক পুরষ্কারও জুটেছে মোদীর কপালে। সিওল পিস ফাউন্ডেশনের তরফ থেকে মোদীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ‘সিওল শান্তি পুরষ্কার’। আর সেই পুরষ্কার মোদী উৎসর্গ করেছেন দেশবাসীকে।
না, হামলার সাত দিনে দেশ ও আন্তর্জাতিক স্তরে ৪৪ শহীদ জওয়ানদের স্মৃতিতে একটি শব্দও খরচ করেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
