পুলওয়ামায় জৈশ-ই-মহম্মদের জঙ্গী হামলার ঘটনার পাক যোগের প্রত্যক্ষ প্রমাণ পেয়েছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। তারপর থেকেই পাকিস্তানকে সবক শেখাতে উঠেপড়ে লেগেছে ভারত। পাক শিল্পী-ক্রিকেটারদের পাশাপাশি প্রত্যাঘাতের আওয়াজ উঠেছে দেশজুড়ে। এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পর্যন্ত বলেছেন, ‘ভারত খুব কড়া জবাবের কথা ভাবছে।’ কিন্তু এরপরও ভারত প্রত্যাঘাত হানলে পাকিস্তানও পাল্টা আক্রমণ করবে বলে ইতিমধ্যেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
তবে এই যুদ্ধ-যুদ্ধ আবহে দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে লড়াই হলে পরিস্থিতি যে মারাত্মক আকার নেবে, তা বুঝেই ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করার জন্য পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ওপর চাপ বাড়াচ্ছেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জেনারেল পারভেজ মুশারফ-সহ আরও অনেকে। বিশ্ব রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব, ভারতের সামরিক শক্তি ও আর্থিক ক্ষমতার ব্যাপকতা লক্ষ্য করেই ইমরানকে যুদ্ধ না করার পরামর্শ দিয়েছেন মুশারফ এবং প্রাক্তন পাক বিদেশ সচিব রিয়াজ হুসেন খোকর, রিয়াজ মহম্মদ খান ও ইনামুল হকের মতো পাকিস্তানের তিন শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক।
পুলওয়ামার হামলার পর ভারত বদলা নিতে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালানোর চেষ্টা করলে সর্বশক্তি দিয়ে তা প্রতিরোধ করার ও ভারতকে জবাব দেওয়ার ডাক দিয়েছিলেন ইমরান। এর জেরে পাক সংবাদমাধ্যমের সামনে চলে আসে পরমাণু যুদ্ধের প্রসঙ্গও। সেই প্রসঙ্গে ভারত-পাক যুদ্ধের আবহে ইমরানকে সতর্ক করে এ বার মুখ খুললেন স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা মুশারফ। ১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধের মূল হোতা মুশারফ নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে ভারতকে হাড়ে হাড়ে চিনেছেন। তার ভিত্তিতেই দুবাইয়ে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেছেন, ‘ভারত-পাক সম্পর্ক ফের বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান একটা পরমাণু বোমা ফেললে, ভারত ২০টা ফেলবে এবং পাকিস্তানকে একেবারে মুছে দেবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আশা করি কোনও পরমাণু হামলা হবে না। কিন্তু মনে রাখবেন আমরা (পাকিস্তান) যদি একটা পরমাণু বোমা ভারতে ফেলি, তাহলে ভারত একসঙ্গে ২০টা বোমা ফেলে আমাদের ধ্বংস করে দেবে।’ অর্থাৎ পরোক্ষভাবে পাকিস্তানের পারমাণবিক সামরিক ক্ষমতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন মুশারফ। তবে মুশারফ এ-ও বলেছেন যে, ‘ভারতকে আক্রমণ করতে হলে অন্তত ৫০টি পরমাণু বোমা প্রথমেই ফেলতে হবে। যাতে ভারত ২০টা পরমাণু বোমা ফেলার আগেই ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু এই ৫০টি বোমা নিয়ে আগে হামলা করতে কি আপনারা (পাকিস্তান) প্রস্তুত?’
অন্যদিকে, রবিবার জনপ্রিয় পাক সংবাদপত্র ‘ডন’-এ ‘এখন সংযমের সময়’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তাতে ওই তিন প্রবীণ পাক কূটনীতিক ভারত নিয়ে একই মত প্রকাশ করে লিখেছেন, ভারতের যে কোনও আগ্রাসনের মোকাবিলা করার জন্য প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে তৈরি রাখুক পাকিস্তান। কিন্তু ‘আগ বাড়িয়ে’ পাকিস্তান যেন কখনই ভারতের বিরুদ্ধে কোনও হামলা না করে। তাহলে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানকে দোষী সাব্যস্ত করে ভারত ফায়দা তুলবে।
তাঁদের কথায়, দুই দেশের সম্পর্ক এখন ‘বিপজ্জনক’ অবস্থায় রয়েছে। যুদ্ধ শুরু হওয়াটা সময়ের অপেক্ষা মাত্র। কারণ ভারত নদীর জল বন্ধ করে, সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ করে, পণ্যে অস্বাভাবিক শুল্ক চাপিয়ে, আর্থিকভাবে পাকিস্তানকে আরও অন্ধকারে ঠেলে দিয়ে পাকিস্তানকে ‘শিক্ষা’ দিতে চাইছে। কিন্তু ইসলামাবাদ যদি এতে ক্রুদ্ধ হয়ে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে তাহলে ‘বিরাট ভুল’ করবে। কারণ এখন সংযমের সময়। পাকিস্তান আর্থিকভাবে খুব দুর্বল। ভারতের যুদ্ধের ফাঁদে পা দেওয়া উচিত হবে না। এমনটাই মত ওই পোড়খাওয়া পাক কূটনীতিকদের।
তাঁরা এ-ও লিখেছেন, মুম্বইয়ে জঙ্গী হামলার পর ভারত সংযম দেখিয়েছিল। কারণ, তখন ভারতে অন্য সরকার ছিল। পুলওয়ামার হামলা মুম্বইয়ের তুলনায় বড় ঘটনা নয়। কিন্তু এখন ভারতে একটি আগ্রাসী সরকার রয়েছে। এরা পাকিস্তানকে দোষী সাব্যস্ত করে সামরিক আগ্রাসন চালাবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পর্যন্ত বলছেন, ভারতে পুলওয়ামার উপযুক্ত বদলা নিতে গোপনে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাই তাঁদের পরামর্শ, ভারতের সামরিক ও কূটনৈতিক প্রস্তুতি নিয়ে কঠোর নজরদারি চালাক ইসলামাবাদ। ভারতের আগ্রাসনের মোকাবিলা করতে সবরকমভাবে তৈরি থাকুক। কিন্তু আগেভাগে যেন আক্রমণ না করে পাকিস্তান।