১৪ই ফেব্রুয়ারি কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আধা সামরিক বাহিনী’র কনভয়ে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গী সংগঠন হামলা চালায়। যাতে শহীদ হন মোট ৪৯ জন জওয়ান। এরপর থেকেই ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে গোটা দেশ। পাশাপাশি দেশজুড়ে উঠেছে পাক বয়কটের ডাক৷ ইতিমধ্যেই পাক-শিল্পীদের বয়কট করেছে বলিউড। তবে সমস্ত ক্ষেত্রেই পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদের ডাক দিয়েছে একটা মহল৷ যার ফলে আসন্ন বিশ্বকাপে ভারত-পাক ম্যাচ বয়কটের দাবিতে সরব হয়েছেন অনেকে৷
কিন্তু, এক্ষেত্রে অন্য পথে হেঁটেছেন ভারতের কিংবদন্তি ক্রিকেটার শচীন তেন্ডুলকর৷ এভাবে পাকিস্তানকে জবাব দেওয়ার পক্ষপাতী নন তিনি৷ বরং খেলার মাঠেই ওদের পর্যদুস্ত করে মোক্ষম জবাব দেওয়ার কথা বলেছেন ‘লিটল মাস্টার’৷ আর এটাই হয়তো ‘বড় ভুল’ হয়ে গিয়েছে তাঁর৷ যার জেরে প্রখ্যাত সাংবাদিক অর্ণব গোস্বামীর রোষের মুখে পড়তে হল ‘ভারতরত্ন’ শচীনকে৷ কার্যত ভদ্রতার সমস্ত সীমা লঙ্ঘন করে তেন্ডুলকরকে ‘দেশদ্রোহী’ বলে বসেন অর্ণব৷ তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে ইতিমধ্যেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়৷
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের সঙ্গে খেলার বিষয় নিয়ে সম্প্রতি তেন্ডুলকরকে প্রশ্ন করা হয়৷ জানতে চাওয়া হয় এই বিষয়টি তিনি কীভাবে দেখছেন৷ উত্তরে ‘মাস্টার ব্লাস্টার’ বলেন, ‘বিশ্বকাপে সবসময় পাকিস্তানকে পর্যদুস্ত করে এসেছে ভারত। আবার সময় এসেছে ওদের আরও একবার হারানোর। আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই না দুই পয়েন্ট দিয়ে প্রতিযোগিতায় ওদের সাহায্য করতে।’ একইসঙ্গে তিনি এ-ও বলেন, ‘আমার কাছে আমার দেশ ভারতই সবার আগে। তাই আমার দেশ যা সিদ্ধান্ত নেবে, আমি তাকে সমর্থন করব।’ একই সুরে কথা বলেন গাভাসকারও।
কিংবদন্তি ক্রিকেটারদের এই ব্যক্তিগত মতকেই নিজের টক শো’তে হাতিয়ার করেন অর্ণব গোস্বামী৷ শচীন ও গাভাসকরের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আমি ভগবানে বিশ্বাস করি না৷ শচীন তেনডুলকর ১০০ শতাংশ ভুল বলছেন৷ ওঁর যদি সামান্যতম বুদ্ধি থাকত, তবে উনি প্রথম ব্যক্তি হতেন যে বলত, পাকিস্তানের সঙ্গে খেলব না৷ দ্বিতীয় ব্যক্তি হতেন গাভাসকার৷ অর্ণব আরও বলেন, ‘এঁরা বলছেন আমাদের দুই পয়েন্ট দরকার৷ দু’জনেই ভুল বলছেন৷ আমাদের দুই পয়েন্টের প্রয়োজন নেই৷ আমরা শহীদের বলিদানের প্রতিশোধ চাই৷ কোনও আস্তাকুঁড় থেকেও ওই দুই পয়েন্ট নিয়ে আসতে পারবেন তেন্ডুলকর৷’
এখানেই শেষ নয়, ‘গড অফ ক্রিকেট’ তেন্ডুকরকে ‘দেশদ্রোহী’ বলেও, তার সমালোচনা করেন অর্ণব গোস্বামী৷ যা শোনার পর নিজেদের ঠিক রাখতে পারেননি ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত দুই অতিথি আশুতোষ ও সুধাংশু কুলকার্নি৷ কড়া ভাষায় অর্ণব গোস্বামীর সমালোচনা করে অনুষ্ঠান ছেড়ে চলে আসেন তাঁরা৷ সাংবাদিক অর্ণবের মন্তব্যকে ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়াতেও শুরু হয়েছে হইচই৷ প্রশ্ন উঠেছে শচীন, গাভাসকারের মতো মানুষরা বারবার দেশের মাথা উঁচু করেছেন৷ এমনকি নিজের বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে দেশে এসেও শ্রাদ্ধানুষ্ঠান না করেই ইংল্যান্ডে দেশের জন্য বিশ্বকাপ খেলতে ফিরে গিয়েছিলেন শচীন। এরপরও কীভাবে তাঁদের ‘দেশদ্রোহী’ বলতে পারলেন অর্ণব? প্রবলভাবে উঠছে এ প্রশ্ন।
অন্যদিকে, শচীন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলার পক্ষে সওয়াল করলেও, তাঁর ঠিক বিপরীত অবস্থান নিয়েছেন হরভজন সিং, আজহারউদ্দিনের মতো ক্রিকেট তারকারা। তাঁরা কিন্তু পাক ম্যাচ বয়কটের পক্ষেই সওয়াল করেছেন৷ তবে গাভাসকার জানিয়েছেন, ‘বোর্ড এই উদ্যোগ নিতেই পারে। কিন্তু সেটা কার্যকর হবে বলে মনে হয় না। কারণ অন্য দেশগুলো এতে রাজি হবে না। আর একান্তই যদি ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে না খেলে, তা হলে আমাদেরই ক্ষতি। দু’পয়েন্ট পেয়ে যাবে পাকিস্তান।’