নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। তাদের ক্রিকেট ইতিহাসে এটাই সম্ভবত সবচেয়ে বাজে সময়। সনৎ জয়াসুরিয়া-অরবিন্দ ডি সিলভা কিংবা মাহেলা জয়াবর্ধনে-কুমার সাঙ্গাকারাদের রেখে যাওয়া পরম্পরা ধরে রাখতে পারেনি চণ্ডিকা হাথুরুসিংহের দল। প্রচুর নতুনের আমদানি হচ্ছে, দলের সিনিয়র খেলোয়াড়েরাও রয়েছেন আসা-যাওয়ার মধ্যে। কিন্তু হাথুরুসিংহের এই ভাঙাচোরা শ্রীলঙ্কাই দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে আজ যে ইতিহাস গড়ল তার দেখা পাননি জয়াসুরিয়া কিংবা জয়াবর্ধনেদের প্রজন্মও। এমনকি, দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে অবিশ্বাস্য এই ইতিহাস গড়তে পারেনি এশিয়ার আর কোনো দলই!
পোর্ট এলিজাবেথে টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ১৮ উইকেট পতনের পরই মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিল শ্রীলঙ্কা ইতিহাস গড়ার বেশ কাছে। জয়ের জন্য ১৯৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ২ উইকেটে ৬০ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করে সফরকারী দল। বাকি ১৩৭ রানের লক্ষ্য ছুঁতে ৩০ ওভারও লাগেনি দিমুথ করুনারত্নের দলের। ওশাদা ফার্নান্দো ও কুশল মেন্ডিসের ফিফটিতে ভর করে শ্রীলঙ্কার ৮ উইকেটের জয় তাঁদের ক্রিকেট ইতিহাসে হিরণ্ময় সাফল্যগাথার অংশ। দুই টেস্টের সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকাকে তাদেরই মাটিতে হারতে হল ২-০ ব্যবধানে।
শুধু কী তা–ই? ইতিহাস বলছে দক্ষিণ আফ্রিকায় এর আগে টেস্ট সিরিজ জিততে পেরেছে শুধু অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থানীয় ভারত প্রোটিয়াদের মাটিতে গত বছর টেস্ট সিরিজ হেরেছে ২-১ ব্যবধানে। আর একই র্যাঙ্কিংয়ে বর্তমান ক্রিকেটে শীর্ষ পাঁচ দলের (ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড) বাইরে থাকা শ্রীলঙ্কা কিনা সেই প্রোটিয়াদের মাটিতেই টেস্ট সিরিজ জিতল এশিয়ার প্রথম হিসেবে!
দেশের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকা সবশেষ হারতে হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার কাছে, ২০০৬ সালে। এক যুগেরও বেশি সময় পর প্রোটিয়াদের আবারও সেই ভুলে যাওয়া তেতো স্বাদ উপহার দিল শ্রীলঙ্কা। এই শ্রীলঙ্কা, যাদের সম্ভবত আজকের আগ পর্যন্তও ভাবা হয়েছে উপমহাদেশের ক্রিকেটে বর্তমানের সবচেয়ে দুর্বলতম দল হিসেবে! কিন্তু সুরঙ্গা লাকমল (৪/৩৯) ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভারা (৩/৩৬) দ্বিতীয় দিনেই জয়ের সুবাস এনে দিয়েছেন শ্রীলঙ্কাকে।
পেসবান্ধব উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা অস্ত্রকেই ভোঁতা বানিয়ে দিল শ্রীলঙ্কা। বিশ্বকাপের আগে আত্মবিশ্বাসের জন্য এর চেয়ে ভালো দাওয়াই আর কোথাও মিলত না হাথুরুসিংহের দলের।