জানি অনেকেই খুশি হবেন না তবু বলি, কুৎসা, নিন্দা, সন্ত্রাস তুচ্ছ করে উন্নয়নের ফুল ফুটছে বাংলায়, তা নয়ন মেলে দেখুন। হিংসেয় অনেকে নীল হয়ে যাবেন, তবু জানাই বাংলার অভিনব উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পাচ্ছে। কন্যাশ্রী পর রাষ্ট্রসংঘের স্বীকৃতি পেতে চলেছে রাজ্যের উৎকর্ষ বাংলা এবং সবুজ সাথী প্রকল্প। বাংলার শত্রুরা রাজ্যের উন্নয়নকে যখন স্তব্ধ করার চেষ্টা চালাচ্ছে তখন এই সাফল্য বাংলার পিছিয়ে থাকা মানুষ ও সম্প্রদায়ের মধ্যে এক নতুন আশার সঞ্চার করেছে। এটা সম্ভব হয়েছে আমাদের প্রিয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যোগ্য নেতৃত্ব ও দূরদর্শী অভিনব পরিকল্পনার জন্য। তার সঙ্গে কারও রাজনৈতিক বিরোধিতা থাকতেই পারে কিন্তু দল ও মতের ঊর্ধ্বে উঠে রাজ্যের পিছিয়ে থাকা মানুষগুলির আগের অবস্থা ও এখনকার অবস্থা তুলনা করলেই দেখতে পাবেন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান সহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই রাজ্য অনেকটাই এগিয়েছে। ভুল হলে সমালোচনা করুন, অন্যায় হলে প্রতিবাদ করুন কিন্তু রাজ্যের সাফল্যে আনন্দে মেতে ওঠার বদলে সন্দেহজনক নীরবতা এবং সেই সুফলগুলিকে ধ্বংস করার রাজনীতির কোন মানে আমি বুঝতে পারিনা।
সম্প্রতি রাষ্ট্রসংঘে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মোট ১১৪০টি জনমুখী প্রকল্পের মধ্যে কোনগুলি সেরা তা নিয়ে ভোট হয়। মোট ভোটদাতার সংখ্যা ২০লক্ষ, আর এতেই প্রথম পাঁচের মধ্যে উঠে এসেছে রাজ্যের দুটি প্রকল্প উৎকর্ষ বাংলা ও সবুজ সাথী। আগামি ৯ই এপ্রিল জেনিভাতে পুরস্কার প্রাপকদের নাম ঘোষণা করা হবে। নিন্দুকরা আর যাইহোক এবার রাজ্য সরকার কোনভাবে ম্যানেজ করে পুরস্কার প্রাপকদের তালিকায় নিজেদের নাম তুলেছে এমন কথা বলতে পারবেন না। অবশ্য রাজ্যের কর্মহীন নিন্দুক সমাজের পক্ষে কোনকিছুই অসম্ভব নয়। কোনকিছুকেই এরা খোলা মনে বিচার করতে পারেন না। সবকিছুতেই রাজনৈতিক অভিসন্ধি খোঁজেন এরা। এই নিন্দা ও কুৎসা এবং সবকিছুতেই ভুল খোঁজার রাজনীতি বাংলাকে পিছিয়ে দিয়েছিল, তৃণমূল নেত্রীর উন্নয়ন প্রকল্পগুলি এই রাজ্যকে আবার অগ্রগতির মসৃণ সড়কে পৌঁছে দিয়েছে।
প্রকল্পগুলির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের দিকে তাকালেই আমাদের দিদির উন্নয়ন ভাবনার সার্বিক চেহারাটা পরিষ্কার হবে। সবুজ সাথী প্রকল্পের কথাটাই বলি, এই প্রকল্পে ৯ থেকে ১২বছরের স্কুলে যাওয়া ছেলেমেয়েদের সাইকেল দেওয়া হবে। যারা একটু প্রবীণ তারা মনে করতে পারেন একসময় সাইকেল ছিল গ্রামে একটি সম্পন্ন পরিবারের প্রতীক। কবিতায় আমরা পড়েছি � চড়িতেছি সাইকেল দেখিতে কী পাওনা। আমার নিজের কথাই বলি, গরীব অভাবী পরিবারে আমার বড় হয়ে ওঠা। আমাদের পরিবারে কোন সাইকেল ছিলনা। ক্লাস থ্রিতে পড়ার সময় বাড়িতে প্রথম সাইকেল ঢুকল, হারকিউলিস সাইকেল। চালানো তো দূরের কথা, সেই সাইকেলের গায়ে হাত বোলানো ছাড়া আমাদের কোন ভাইয়েরই কিছু করার ছিলনা। সেই সাইকেল চালানো নিয়ে সব ভাই এমনকি ছোটপিসির সঙ্গেও ঝগড়া লেগে যেত। গ্রামের বড়লোকদের বাড়ির ছেলেমেয়েদের সাইকেলে করে স্কুলে আসতে দেখতাম। সেসব দেখে আমিও বাবার কাছে বায়না করেছিলাম আমাকে সাইকেল কিনে দাও। এক ধমকে বাবা আমাকে চুপ করিয়ে দিয়েছিল। বাড়িতে সাইকেল ঢোকার পর আমরা যেন জাতে উঠলাম।
সেই সাইকেল এখন সবুজ বাংলার সবুজ ছেলেমেয়েদের সবুজ সাথী। তাদের দীর্ঘ পথ পেরিয়ে স্কুলে যাওয়ার সঙ্গী। স্কুলে যাতায়াতের পরিশ্রম, পড়ার সময়, হাজিরার সময় সবকিছুতে এই সাইকেল এনে দিয়েছে বিরাট পরিবর্তন। ধনী- নির্ধন, দল-মত, জাতি-বর্ণ-সম্প্রদায় নির্বিশেষে সবাই সাইকেল পাবে। দিদির পরিকল্পনায় বাংলার স্কুল শিক্ষায় এই পরিবেশবান্ধব যানটি এখন বিরাট ভুমিকা নিয়েছে। আমার বেশ মনে পড়ছে রাজ্যের স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সাইকেল দেওয়া শুরু হওয়ার সময় অনেকেই কটাক্ষ করেছিলেন এসব হচ্ছে ভোট পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি। সেদিন থেকেই মনে মনে ভেবে নিয়েছিলাম, সাইকেল, শিক্ষা, চিকিৎসা এসব তো সবাই পেতে চায়, এই চাওয়ার মধ্যে অন্যায় কোথায়? যারা এই চাওয়াটাকে স্বীকৃতি দেবে এবং পাওয়ার ব্যবস্থা করবে তাদের সঙ্গেই আমি চিরদিন থাকবো। চার বছরে এখনও অবধি নবম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণীতে পাঠরত ছাত্রছাত্রীদের প্রায় ৮০লক্ষ সাইকেল দেওয়া হয়েছে।
রাজ্য সিপিএমের সদর দপ্তর আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে এক সাংবাদিক সন্মেলনে আমার এক ঘনিষ্ট সাংবাদিককে বিমানদা আক্ষেপ করে বলেছিলেন, জানো ওই সাইকেল আমরাও দিয়েছি। আর এই মেয়েটিকে দেখো, জেলার পর জেলা ১০০-২০০ সাইকেল ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে নিজের হাতে বন্টন করেন, কোন ক্লান্তি নেই। মেয়েটা একাই আমাদের হারিয়ে দিল। সত্যি আমরাও দেখেছি মঞ্চে উঠে বুদ্ধদাকে সাইকেল দিতে। কিন্তু তিনি দু-তিনটে সাইকেল দিয়ে নেমে যেতেন। আপনারা নিশ্চয়ই এই দুজনের দেওয়ার তফাৎটা বুঝতে পারছেন। একজনের কাছে এটা ছিল একটা রুটিন কাজ, আরেকজনের কাছে এটা হল বাংলার ছেলেমেয়েদের স্কুলে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করার জন্য একটা কর্তব্য। মেয়েটি মানে আমাদের দিদি, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
উৎকর্ষ বাংলা, রাজ্যের বেকার ছেলেমেয়েদের পেশাগত উৎকর্ষ বাড়ানোর জন্য নানা কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়ার একটি প্রকল্প। এতে ২৩টি পেশাতে ছেলেমেয়েদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন রাজ্যের কারগরি শিক্ষা প্রশিক্ষণ দপ্তর। গত তিনবছরে সারা রাজ্যে সাড়ে তিনলক্ষ ছেলেমেয়ে প্রশিক্ষণ পেয়ে এরফলে স্বাবলম্বী হয়েছে। বেকার সমস্যা নিয়ে শুধুই হাহুতাশ না করে, বেকার ছেলেমেয়েদের রাজনীতির ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার না করে, একাজটি হয়েছে তৃণমূল আমলে। আজকের সময়ে বিশেষ বিশেষ পেশার কাজে উৎকর্ষ না থাকলে কর্মসংস্থান হওয়া সত্যিই মুশকিল। বাম আমলে এই সমস্যাটা সমাধান করার কোন চেষ্টাই হয়নি। কোন কোন পেশার চাহিদা আছে তা নির্ণয় করার কোন বিজ্ঞানসম্মত পরিকল্পনাও ছিলনা। ট্রেনিং বলতে ছিল কতগুলি বাঁধাগতের কারিগরি শিক্ষা। এতে কাজ হত না। উৎকর্ষ বাংলা সেই ছবিটাই বদলে দিয়েছে।
কন্যাশ্রী বদলে দিয়েছে নারীশিক্ষা ও বাল্যবিবাহের চেনা ছবি। সবুজ সাথী ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাতায়াতের সমস্যা দূর করে তাদের পড়াশুনার সময় বাড়িয়েছে। পরিবারে এসেছে সাইকেল নামে একটি প্রয়োজনীয় সম্পদ। উৎকর্ষ বাংলা রাজ্যের যুবক যুবতীদের যুগোপযোগী কর্মশিক্ষার মাধ্যমে নতুন নতুন পেশার দক্ষতা বাড়িয়ে কাজের সুযোগ করে দিয়েছে। উন্নয়নের এই ত্রহ্যস্পর্শে বাংলার এগোনোর স্বীকৃতি হল পরপর তিনটি প্রকল্পের আন্তর্জাতিক পুরষ্কার। জানি বিরোধীরা মনে মনে রেগে যাচ্ছেন কিন্তু বিশ্বাস করুন এসব শুধু ম্যানেজ করে হয়না। এগুলো হচ্ছে দিদির কাজের স্বীকৃতি। নিন্দায়, কুৎসায় সময় না কাটিয়ে নিজেদের এই কর্মযজ্ঞে যুক্ত না করলে আপনারা কিন্তু পিছিয়ে পড়বেন। গুপী বাঘার মত সরলতা আপনাদের কাছ থেকে আশা করি না, কিন্তু একটা অনুরোধ রইলো, এই উন্নয়ন কিন্তু সত্যি নয়ন মেলে দেখার মত ব্যাপার।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত