পুলওয়ামাতে আত্মঘাতী জঙ্গী হামলায় যখন ৪৪ জন জওয়ানের মৃত্যু হয়, রক্ত পোড়া মাংসের গন্ধে ভরে উঠেছিল চারপাশ তখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ব্যস্ত ছিলেন জিম করবেট জাতীয় অরণ্যে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের তথ্যচিত্রের শুটিং করতে! এই ঘটনা সামনে আসার পরেই নিন্দার ঝড় উঠেছে চারপাশে। নিন্দা করছেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা। অত্যন্ত ন্যক্কারজনক এই ঘটনায় আবারও মোদীকে করলেন রাহুল গান্ধী। কংগ্রেস সভাপতি টুইট করেছেন, “পুলওয়ামায় ৪০ জন আধাসেনার মৃত্যুর খবর পাওয়ার ৩ ঘণ্টা পরেও শুটিং জারি রাখেন প্রাইম টাইম মিনিস্টার। শহিদের আপনজনেরা যখন বেদনাতুর, বিহ্বল, এক সমুদ্রসমান অনুভূতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন নদীর ধারে সানন্দে ফটোশুট করছিলেন প্রধানমন্ত্রী”। টুইটের সঙ্গে উত্তরাখণ্ডের নৈনিতাল হ্রদে মোটরবোটে সওয়ার প্রধানমন্ত্রীর ছবিও পোস্ট করেছেন তিনি।
পুলওয়ামা প্রসঙ্গ তুলে তিরুপতির জনসভায় ‘প্রচারলোভী’ মোদীকে বিঁধেছেন রাহুল। তাঁর কথায়, ‘‘এই আচরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর লজ্জা হওয়া উচিত। তিনি নিজেকে জাতীয়তাবাদী বলেন। কিন্তু পুলওয়ামায় যখন ৪০ জওয়ানের রক্ত ঝরছে, সে সময় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে তিনি নিজের উপর ছবি বানাচ্ছেন। বিন্দুমাত্র সহানুভূতি নেই জওয়ানদের যন্ত্রণার। মৃত্যুমুখী জওয়ানদের সাহায্যের থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আরও গুরুত্বপূর্ণ ক্যামেরার সামনে হাসিমুখে দাঁড়ানো, নৌকাবিহার করা। এখনও নিহত জওয়ানদের পরিবারের কাছেও যাননি তিনি।’’
কংগ্রেসের মণীশ তিওয়ারি প্রশ্ন তুলেছেন, প্রধানমন্ত্রী যদি পুলওয়ামার ঘটনা জানতেন, তা হলে রুদ্রপুরের সভায় তার উল্লেখ করলেন না কেন? পুলওয়ামার ঘটনা ঘটেছে দুপুর ৩টে ১০ মিনিটে। আর দূরদর্শন প্রধানমন্ত্রীর মোবাইল ফোনে বক্তৃতা সরাসরি সম্প্রচার করেছে বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে। সেই বক্তৃতায় পুলওয়ামার উল্লেখ নেই। জওয়ানদের স্মৃতিতে নীরবতা পালনের কথাও নেই।
সব থেকে বড় যে প্রশ্নটি কংগ্রেস তোলে তা হল, হামলার দু’ঘণ্টা পরেও যদি সে কথা প্রধানমন্ত্রী না জানেন, তা হলে সেটা তো জাতীয় নিরাপত্তার দিক থেকে আশঙ্কার বিষয়! পাকিস্তান পরমাণু শক্তিধর দেশ। তাদের হামলার দু’ঘণ্টা পরেও প্রধানমন্ত্রীর মুখে একটি শব্দও নেই! তা হলে কি তাঁকে জানানো যায়নি? তিনি মোবাইলে বক্তৃতা দিতে পারেন, কিন্তু তাঁকে মোবাইলে হামলার খবর জানানো যায় না? একমাত্র প্রধানমন্ত্রীই এর জবাব দিতে পারেন। যে কারণে রাহুল টুইট করেছেন, ‘‘৪০ জওয়ানের মৃত্যুর পরেও ‘প্রাইম টাইম মিনিস্টার’ ছবির শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন। দেশের হৃদয় ও নিহত জওয়ানদের ঘরে দুঃখ ছড়িয়ে পড়েছে, আর তিনি হাসিমুখে ফটোশুট করছেন। #ফটোশুটসরকার।’’