১|.
নভজোৎ সিং সিধু তখন পুরোদমে ভাষ্যকার। শচীনের জনপ্রিয়তা বোঝাতে বলেছিলেন, ভারতে প্রধানমন্ত্রীকে ও একবার অন্তত কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায়। কিন্তু শচীন টেন্ডুলকারের দিকে একবার আঙুল ও যদি কেউ তোলে গোটে দেশে আগুন লেগে যাবে৷
ভারতবর্ষে ডজনখানেক ধর্মের মধ্যে একটি প্রধান ধর্ম ক্রিকেট আর তার দেবাদিদেব শচীন রমেশ তেন্ডুলকার। এমন একটি নাম যা ১২০ কোটি দেশবাসীকে এক করতে পারে।
আপনি শচীনকে পছন্দ নাই করতে পারেন। কিন্তু গোটা স্টেডিয়াম যখন একসাথে মন্ত্রোচ্চারণের মতো শ….চীননন… শ…চীন বলতো আপনার গায়ে কাঁটা দিতো। লিটল মাস্টার যখনই ব্যাট করতে নেমেছে আপনি সব ফেলে খেলা দেখতে বসেছেন৷ হাউ হাউ করে কেঁদেছেন যখন শেষবার ক্রিকেট-ভগবান মাঠ ছেড়েছে, শেষবারের মতো দেশের পতাকা গায়ে জড়িয়ে।
এটাই বোধহয় একমাত্র আফিম যাতে হিন্দু মুসলিম অস্ত্র ফেলে বাইশ গজের লড়াই দেখে। এটাই বোধহয় একমাত্র যুদ্ধ যেটা জিতলে বিশ্বযুদ্ধ জেতার স্বাদ মেলে। কালাশনিকভ নয়। এ লড়াই ক্রিকেট ব্যাটে জেতা যায়। এ দেশপ্রেমী না দেশদ্রোহী তার বিচার করবে সে যে রোজ ঠান্ডা ঘরে বসে কাল্পনিক কালাশনিকভ আর কামান দাগে?
২|.
১৯৮৮ সালে পুরনো দিল্লি থেকে একজন ফের আরব সাগর তীরে এসেছিল। শ্যামবর্ণ, গালে টোল আছে। মুম্বাইয়ের মেরিন ড্রাইভ এলাকার ঠিক মাঝে যেখান থেকে সমুদ্র আর চারপাশ সমুদ্ররানীর নেকলেসের মতো লাগে, ঠিক সেখানে দাঁড়িয়ে ছেলেটা সেদিন বলেছিল, একদিন আমি এই গোটা শহর রাজ করবো৷ তিরিশ বছর বাদে সেই ছেলেটিই একটা গোটা দেশে পরিনত। যার নিজের প্রজা আছে, দেশ বিদেশে নাগরিক আছে, মানুষ আছে যারা ভাবে শাহরুখ একটি দেশের নাম।
Sex & Shahrukh Khan sells. অর্থাৎ আপনি যাহাই বানান না কেন, তাতে এই দুই মশলা মাখায়ে দ্যান। পাবলিক আজ ও খাবে৷ পাঠকগন, পাবলিক মানে এখানে কিন্তু আফগানিস্তান থেকে আলাবামা। আজ্ঞে৷ পৃথিবীর মানচিত্রে এরকম অনেক দেশ আছে যেখানে গিয়ে আপনি নিজের দেশের নাম বললে, সবার আগে সে দেশের ট্যাক্সি ড্রাইভার বলবে, ও ল্যান্ড অফ শাহরুখ খান! ছাইয়া ছাইয়া!
যে ছেলেটি স্কুললাইফ থেকে জেল দিয়ে ব্যাকব্রাশ করে, হাত দিয়ে চুল কপালের থেকে সরিয়ে নেয়, একলা ঘরে আয়নার সামনে দু হাত ছড়িয়ে আকাশের দিকে তোলে খোঁজ নিয়ে দেখুন সে শাহরুখ খান নামক দেশের নাগরিক।
যে মেয়েটি একবার অন্তত জীবনে “Mere Khwabo mein jo aaye” একলা ঘরে তোয়ালে চেপে নেচেছে, যে রোজ রাতে “Dil Se” দেখে ভেবেছে ওর নিশ্বাসে ও যদি ওভাবে কেউ নিশ্বাস নিত,যার নাম শম্পা, সাবিত্রী, চম্পা, চামেলি যাই হোক না কেন, সে আসলে সিমরন, যাকে zindegi বাঁচতে শিখিয়ে দিয়ে গেছে একটা দেশ। নাম শাহরুখ খান। এ দেশপ্রেমী না দেশদ্রোহী তার বিচার করবে তারা যারা নব্বইয়ের দশকে মসজিদ ভেঙেছিল আর গোটা দেশে দাঙ্গা লাগিয়েছিল?
৩|.
না ভারতের মুসলমানরা কোনদিন চায় না পাকিস্তানে চলে যেতে। কাশ্মীরিরা চায় না পাকিস্তানে মিশে যেতে। এরা সুযোগ থাকলে ও দেশভাগের সময় এ দেশে থেকে গেছিল কারণ তারা ইসলামি রাষ্ট্রের অংশ হতে চায়নি। ওরা চায়নি এমন এক মানুষকে কায়েদ এ আজম বলতে যে ব্যক্তিজীবনে মদ, শুয়োরের মাংস, পাশ্চাত্য সংস্কৃতিকে আপন করে নিলে ও দেশকে বানিয়েছিল এক কট্টরপন্থী ইসলামী রাষ্ট্র। ওদের সাথে কথা বলুন। দেখবেন ওরা ও ঘৃণা করে সন্ত্রাসবাদের আঁতুড়ঘর পাকিস্তানকে। দেশের প্রথম পরমবীর চক্রে ভূষিত সেনা জাওয়ান আব্দুল হামীদ, এ.আর. রহমান, উস্তাদ বিসমিল্লাহ খান, আব্দুল কালাম, আজাদ, মুহাম্মদ রফি ওদেরই একজন। এরা দেশপ্রেমী না দেশদ্রোহী তার বিচার করবে তারা যারা রোজ হিন্দুকে মুসলিমের সাথে, ব্রাহ্মণকে দলিতের সাথে, উত্তর ভারতীয়কে দক্ষিণ ভারতীয়র সাথে, কাশ্মীরকে জম্মুর সাথে রোজ লড়িয়ে দিচ্ছে?
ভুল জানেন। যারা ঠাঁই ঠাঁই করে গুলি চালায় তারাই কেবল দেশপ্রেমিক নয়। এর বাইরে ও অনেকে আছে। কে দেশপ্রেমী আর কে দেশদ্রোহী তার বিচার করবে কে? হীরকরাজ? না।
করবে উদয়ন মাস্টার, করবে গফুর মিঁয়া, করবে হিরার খনির মজুর, করবে কৃষক, করবে শ্রমিক, ছাত্র, যুব, মৃত জাওয়ানের শোকসন্তপ্ত পরিবার।
দ্রোহকালে এরাই দড়ি ধরে মারে টান। Jingoism খানখান।
©—— ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ