মেদিনীপুর, খড়গপুর, ঘাটাল, দাসপুর, বেলদা, চন্দ্রকোনার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরছে অটো। কোনওটায় লেখা ‘গুজব ছড়াবেন না’, কোনওটায় লেখা ‘গুজব শুনে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটাবেন না’। অটো, টোটোর পেছনে বাঁধা ফ্লেক্স। হ্যাঁ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ পাওয়া মাত্রই ভুয়ো খবর ও ধর্মীয় বিদ্বেষ রুখতে জেলায় জেলায় এমনই সব প্রচারমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। মাইকে প্রচার করা হচ্ছে, লিফলেটও বিলি করা হচ্ছে। এবং তাতে কাজও হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, পুলওয়ামায় জঙ্গী হামলার আগে থেকেই গুজবের জেরে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় গণপিটুনি ও হিংসা ছড়ানো চলছে। পুলিশ কঠোর হওয়ায় অনেকটা সুফল মিললেও বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কিছু এলাকায় হঠাৎ হঠাৎ ঘটনা ঘটছে। ছেলেধরা রটিয়ে মহিলা, পুরুষ নির্বিশেষে নিগ্রহ করা হচ্ছে। কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী জেলাতেও অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটছে। এবার মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্যে ও কলকাতায় গুজব ছড়ানো রুখতে কঠোরতম ব্যবস্থা নিল পুলিশ। ইতিমধ্যেই রাজ্যে গুজব ঘিরে ২২টি মামলা হয়েছে। ৪০ জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।
শুক্রবার নবান্নে একসঙ্গে সাংবাদিক বৈঠক করে বার্তা দিলেন এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) সিদ্ধিনাথ গুপ্তা এবং কলকাতা পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা। সিদ্ধিনাথ গুপ্তা জানান, গুজব ছড়িয়ে গোলমাল পাকানোর অভিযোগে ৪০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাইরে থেকে এই বিষয়টি ছড়ানো হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে পুলিশের তরফ থেকেও জনসাধারণের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে, গুজবে কান দেবেন না। গুজবের ঘটনা ঘটলেই পুলিশকে জানান।
গতকাল কলকাতার নগরপাল অনুজ শর্মা বলেন, গুজব ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, আরও হবে। অনেক মামলা হয়েছে, গ্রেফতারও করা হয়েছে। কিছু লোক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করছে। কেউ ব্যক্তিগতভাবে, কেউ রাজনৈতিকভাবে। আমরা লক্ষ্য করেছি, রাতের দিকে গুজব ছড়িয়ে গোলমালের ঘটনা ঘটছে। বিষয়টি বন্ধ করার জন্য প্রতিটি এলাকার শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ এবং স্থানীয় ক্লাব ও অন্যান্য সংগঠনকেও বলা হয়েছে, গুজবের ঘটনা ঘটলে দ্রুত পুলিশকে জানান। আইন নিজের হাতে নেবেন না। পুলিশকে জানালেই তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি জানান, আমরা সোশ্যাল মিডিয়ার ওপরেও নজর রাখছি।ইতিমধ্যেই গোয়েন্দা দল নামানো হয়েছে। গুজব আটকানোর জন্য থানাগুলিকে সতর্কও করা হয়েছে। লিফলেট দেওয়া হয়েছে। মানুষকে সতর্ক করতে থানা এলাকাগুলিতে মাইকিং করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে কোনও রেয়াত করা হবে না। মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এরকম ঘটনা ঘটছে, তা শুনলে বা দেখলেই যেন পুলিশকে জানানো হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়া ও হোয়াটসঅ্যাপে নজরদারির পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা টহলদারিও চলবে গুজব রুখতে। হোয়াটসঅ্যাপ বা সোশ্যাল মিডিয়ায় এ ধরনের ঘটনা ধরা পড়লেই আইনের বেশ কয়েকটি ধারায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সাজা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানা গেছে। আর পুলিশের তরফ থেকে সাধারণ মানুষকে গুজবে কান না দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। গুজব ছড়ানোর ঘটনা ঘটলে যেন দ্রুত পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।