রাজ্যে ক্ষমতায় এসেই শিল্পের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রেও একাধিক উন্নয়নমূলক উদ্যোগ নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই পথ ধরে এবার হুগলী জেলাও নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় পেল। শুক্রবার রানি রাসমণি গ্রিন ইউনিভার্সিটি নামের ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। এই নিয়ে ৭ বছরে তৃণমূল জমানায় রাজ্যে ২৮টি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠল। আরও ১০টি গড়া হবে বলে জানা গেছে। একইসঙ্গে হুগলী জেলায় এসে গতকাল ‘মাটি উৎসব’-এরও সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
গতকাল তাঁর ভাষণে মমতা মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘আমাদের ভাবনা কন্যাশ্রী বিশ্বজয় করেছে। তেমনই মাটি উৎসবও। ২০১৩ সালে আমরা এটি শুরু করি। আর ২০১৪-তে রাষ্ট্রপুঞ্জ এই ভাবনাকে স্বীকৃতি দেয়। অর্থাৎ এতেই বােঝা যায়, বাংলাই পথ দেখায় গোটা দেশকে।’ ওদিন বিকেলে তারকেশ্বরের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকেই রিমােট কন্ট্রোলের মাধ্যমে হুগলী-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলার এক গুচ্ছ প্রকল্পের সূচনা করেন মুখমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, তপন দাশগুপ্ত, অসীমা পাত্র, জেলাশাসক জে পি মিনা, পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন, মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার প্রমুখ।
গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ মুখ্যমন্ত্রীর হেলিকপ্টার তারকেশ্বরের বালিগড়িতে নামে। গতকালের সভায়ও মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ভাষণে রাজ্যের উন্নয়নে কেন্দ্রের সহযোগিতার অভিযোগ তোলেন। আয়ুষ্মান ভারত থেকে সামাজিক সুরক্ষায় বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্রের সমালোচনা করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘আয়ুষ্মান ভারত সম্পূর্ণ ভাঁওতা। আমরা তাই ওই প্রকল্প বাতিল করে দিয়েছি। তার বদলে স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের মানুষকে সুবিধা দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সিঙ্গুরের কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দিতে পেরে আমি গর্বিত। সর্বদাই আমি কৃষকের পাশে রয়েছি। জমি ফেরতের দাবিতে সিঙ্গুরে ১৪ দিন ধর্না দিয়েছি। আর কলকাতায় ২৬ দিন। আমরা কথা রেখেছি, শুধু জমি ফেরত নয়, কৃষকদের পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। ভালভাবে চাষ করতে আরও ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।’ অন্যদিকে, সরকারিভাবে কৃষি জমির খাজনা এবং মিউটেশনের ফি মকুব করে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথাও জানান মুখ্যমন্ত্রী। কৃষকদের শস্য বিমার খরচ দেয় রাজ্য সরকার।
গতকাল বারাসত, আরামবাগ, তমলুক এবং ঝাড়গ্রামে
মেডিক্যাল কলেজ গড়ার কথাও ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে সুপার স্পেশ্যালিটি বহির্বিভাগের উদ্বোধন এবং কামারপুকুর গ্রামীণ হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ৩০ থেকে ৪০ শয্যায় উন্নীত করা হল। এছাড়া সল্টলেক মহকুমা হাসপাতালে এক্স-রে মেশিন, পূর্ব বর্ধমানের ডেন্টাল কলেজে অ্যাকাডেমিক ভবন-সহ আরও অনেক প্রকল্পের
উদ্বোধন হয় মুখ্যমন্ত্রীর হাতে।
এর পাশাপাশি গতকাল জেলার বিভিন্ন ব্লকে ৩৭টি নতুন রাস্তা এবং ১৭টি রাস্তার সংস্কার-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় একাধিক প্রকল্পের শিলান্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়াও অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে তিনি কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, স্বাস্থ্য সাথী, সবুজ সাথী, কৃষক বন্ধু প্রকল্প-সহ একাধিক প্রকল্পের পরিষেবা তুলে দেন মানুষের হাতে।