মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে জেলায় জেলায় ভুয়ো খবর ও ধর্মীয় বিদ্বেষ রুখতে কঠোরতম ব্যবস্থা নিল রাজ্যে ও কলকাতা পুলিশ। নেওয়া হয়েছে নানারকম প্রচারমূলক ব্যবস্থাও মাইকে প্রচার করা হচ্ছে, লিফলেটও বিলি করা হচ্ছে। এবং তাতে কাজও হচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, গুজব ছড়ানোর উৎসস্থল বিহার ও উত্তরপ্রদেশ। এখান থেকে ভিডিও বার্তা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের মেসেজ পাঠানো হচ্ছে এ রাজ্যে। মূল লক্ষ্য হল, এখানে যে কোনওভাবে অশান্তি পাকানো এবং মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ তৈরি করা। নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠীর কাছে এই ধরনের প্ররোচনা মূলক বার্তা আসছে। তাদের সঙ্গে বিশেষ একটি দলের সম্পর্ক রয়েছে বলে খবর আছে গোয়েন্দাদের কাছে। তাদের মাধ্যমেই তা ছড়িয়ে পড়ছে গোটা রাজ্যে।
গুজব ছড়ানোর উৎসস্থলের খোঁজখবর করতে গিয়ে রাজ্য পুলিশের হাতে চাঞ্চল্যকর তথ্য এসেছে। প্রমাণস্বরূপ দু’ মিনিটের একটি ভিডিও ফুটেজকে হাতিয়ার করছে তারা। এই ধরনের বার্তা ভিন রাজ্য থেকে যারা ছড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছেন পুলিশকর্তারা। বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা এবং এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) সিদ্ধিনাথ গুপ্তা।
কোথাও শিশুচুরির গুজব ছড়ানো হচ্ছে, আবার কোথাও রটে যাচ্ছে, কিডনি কেটে নিতে হাজির হয়েছে একদল দুষ্কৃতী। বাড়িতে একলা থাকা মহিলা বা শিশুরাই তাদের টার্গেট। এই ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে সমস্ত জেলাতেই। এর জেরে সাধারণ নিরপরাধ মানুষকে উত্তেজিত জনতার হাতে মারধর খেতে হয়েছে। যেভাবে গণপিটুনির ঘটনা ঘটছে, তাতে রীতিমতো উদ্বিগ্ন প্রশাসনের কর্তারা। ইতিমধ্যেই গুজবের বিরুদ্ধে জেলায় জেলায় চলছে প্রচার। মানুষকে আশ্বস্ত করার পাশাপাশি যে বা যারা এই গুজব ছড়াচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।
কিন্তু গুজবের উৎসস্থল কোথায়, সে বিষয়েই বেশি জোর দিয়েছেন পুলিশকর্তারা। যাতে এর শিকড় উপড়ে ফেলা যায়। এই ধরনের ভুয়ো খবর বা গুজব ছড়ানোর অভিযোগে যে বা যারা গ্রেফতার হয়েছে, তাদের মোবাইল ফোনে আসা মেসেজ এবং ছবি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে অফিসাররা জানতে পারছেন, সমস্ত মেসেজই একে অন্যকে ফয়োওয়ার্ড করা। সিংহভাগের কাছেই রয়েছে দু’ মিনিটের একটি ভিডিও ফুটেজ। যাতে বাড়ি থেকে কিডনি কেটে নিয়ে যাওয়া এবং ছেলেধরা চক্রের গুজব ছড়ানো হয়েছে। উত্তেজনা ছড়াতে বিভিন্ন ভুয়ো ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
বলা হচ্ছে, পাঁচশো লোক ভিখারির বেশে ঘুরছে। মানুষকে একলা পেলেই উপড়ে নিচ্ছে হার্ট আর কিডনি। এর উৎস খুঁজতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, সমস্তটাই আসছে উত্তরপ্রদেশ এবং বিহার থেকে। এখানকার নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠী এই কাজে জড়িত। তারা ভুয়ো অডিও -ভিডিও বার্তা তৈরি করছে। বাইরের দেশের কোনও ঘটনা জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। যার সঙ্গে রাজ্য বা দেশের কোনও সম্পর্কই নেই। যারা এই কাজগুলি করছে, তাদের সঙ্গে একটি দলের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। তাদের বড় মাথারাও এই কাজে জড়িত আছেন বলে শোনা যাচ্ছে।
গোয়েন্দাদের অনুমান, এই ধরনের গুজব ছড়ানোর পিছনে ওই দলের প্রচ্ছন্ন মদত রয়েছে। জেনেবুঝেই এ রাজ্যে এই সমস্ত বার্তা পাঠানো হচ্ছে। যাতে হিংসার পরিবেশ তৈরি করা যায়। বিহার ও উত্তরপ্রদেশের কোথায় এগুলি তৈরি হচ্ছে, তা ইতিমধ্যেই ট্র্যাক করে ফেলেছেন গোয়েন্দারা। কারা এর পিছনে রয়েছে, তাদের নামও হাতে এসেছে। তার ভিত্তিতেই সংশ্লিষ্টদের কাজকর্মের উপর নজরদারি শুরু হয়েছে। পাশাপাশি চলছে আরও তথ্যপ্রমাণ জোগাড়ের কাজ। যাতে তাদের বিরুদ্ধে কড়া আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
কলকাতার নগরপাল অনুজ শর্মা বলেন, গুজব ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, আরও হবে। অনেক মামলা হয়েছে, গ্রেফতারও করা হয়েছে। আমরা সোশ্যাল মিডিয়ার ওপরেও নজর রাখছি। ইতিমধ্যেই গোয়েন্দা দল নামানো হয়েছে। গুজব আটকানোর জন্য থানাগুলিকে সতর্কও করা হয়েছে। লিফলেট দেওয়া হয়েছে। মানুষকে সতর্ক করতে থানা এলাকাগুলিতে মাইকিং করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে কোনও রেয়াত করা হবে না। মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এরকম ঘটনা ঘটছে, তা শুনলে বা দেখলেই যেন পুলিশকে জানানো হয়।