গত এক বছর ধরে ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোকে সবচেয়ে যন্ত্রণা দিয়েছেন উরুগুয়ের খেলোয়াড়েরা।
বিশ্বাস হচ্ছে না? একটু ভেবে দেখুন। ফুটবল দুনিয়ার সম্ভাব্য সবকিছু জেতার পর ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর মূল লক্ষ্য এখন দুটি। এক – বিশ্বকাপ জেতা, দুই – রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়া অন্য কোনো ক্লাবের হয়ে এই বয়সে নিজেকে প্রমাণ করা। এই দুটি লক্ষ্য পূরণে রোনাল্ডোর পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়ে গেছেন উরুগুয়ের ফুটবলারেরা। বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে এই উরুগুয়ের কাছেই ২-১ গোলে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছিল রোনাল্ডোর পর্তুগাল। গতকাল চ্যাম্পিয়নস লিগেও উরুগুয়ের দুই ফুটবলারের জন্য দ্বিতীয় রাউন্ডের প্রথম লেগ হারল রোনাল্ডোরা। দ্বিতীয় লেগে নিজেদের মাঠে অবিশ্বাস্য কিছু করতে না পারলে মোটামুটি বলে দেওয়া যায় দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই এবার বিদায় নিচ্ছে জুভেন্টাস। অ্যাটলেটিকোর দুই উরুগুইয়ান ডিফেন্ডার ডিয়েগো গডিন ও হোসে জিমেনেজের গোলমুখো দুই শট আটকানোর সাধ্য ছিল না জুভেন্টাসের পোলিশ গোলরক্ষক ওজিয়েক শেজনির।
এই মরসুমের শুরুতে ১০০ মিলিয়ান পাউন্ডের বিনিময়ে রিয়াল থেকে রোনাল্ডোকে নিয়ে আসে জুভেন্টাস। উদ্দেশ্য মাত্র একটাই— সেটা হলো চ্যাম্পিয়নস লিগ জয় করা। গত পাঁচ বছরের মধ্যে চারবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর ছোঁয়ায় জুভেন্টাস তাদের ২৪ বছরের চ্যাম্পিয়নস লিগ-খরা কাটাবে, এমনটাই ভেবেছিলেন তুরিনের কর্তাব্যক্তিরা। দ্বিতীয় রাউন্ডের প্রথম লেগ হেরে সে স্বপ্নটাকে এই বছরের জন্য জলাঞ্জলি দিতে হবে, অবস্থা এমনই মনে হচ্ছে।
এবার চ্যাম্পিয়নস লিগের ফেবারিট দলগুলোর মধ্যে জুভেন্টাসই সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী, বলা যায়। গত তিনবারের চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ রোনাল্ডোকে হারিয়ে খুব একটা ভালো ফর্মে নেই। পিএসজির আক্রমণভাগ সবচেয়ে শক্তিশালী হলেও সদ্য চোটে পড়া নেইমারকে ছাড়া কত দূর এগোতে পারবে, সেটিও প্রশ্নের বিষয়।গতবারের রানার্সআপ লিভারপুলের ফর্মের ঠিক নেই, কোনো ম্যাচ দুর্দান্তভাবে জিতছে, তো পরের ম্যাচেই অপ্রত্যাশিতভাবে হারছে বা ড্র করছে। ভালভার্দের অধীনে বার্সেলোনা অতিমাত্রায় মেসি-নির্ভর। যেদিন মেসি জ্বলে ওঠেন সে দিন বার্সাও জ্বলে ওঠে। মেসি নিষ্প্রভ থাকলে বার্সাও নিষ্প্রভ থাকে। সব মিলিয়ে বলা যায় জুভেন্টাস এবার সব দিক দিয়েই শক্তিশালী। কিয়েলিনি-বোনুচ্চি-বারজাগলির বজ্রকঠিন রক্ষণভাগের সঙ্গে মিডফিল্ডে মিরালেম পিয়ানিচের অলস সৌন্দর্য, ওপরে রোনাল্ডোর গোলক্ষুধার সঙ্গে মানজুকিচের পরিশ্রম— এবার চ্যাম্পিয়নস লিগে জুভেন্টাসকে ভালো ফেবারিটই মনে করা হচ্ছে। কিন্তু সে আশার গুড়ে বালি ফেলে দিল অ্যাটলেটিকোর সেই উরুগুইয়ানরা!
এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে দাঁড় করানো যেতে পারে রোনাল্ডোর অতি পরিশ্রমকে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে নিজেই মুখ ফুটে বলেছেন, জুভেন্টাসের হয়ে সম্ভাব্য সকল শিরোপা জিততে চান তিনি। এই ‘বুড়ো’ বয়সে এসে ভিন্ন লিগে নিজেকে প্রমাণ করার ভূত চেপেছে তাঁর মাথায়। এই লক্ষ্য পূরণ করার জন্য রোনাল্ডো খাটছেন প্রচুর।
অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে নিজেদের মাঠে দ্বিতীয় লেগ খেলতে নামবে জুভেন্টাস, মার্চ মাসের ১৩ তারিখে। নতুন ক্লাবের চ্যাম্পিয়নস লিগ-স্বপ্নটা জিইয়ে রাখার জন্য নিজের ঝুলি থেকে কোনো জাদুমন্ত্রটা বের করবেন রোনাল্ডো?