ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকেই রুদ্ধ উত্তুরে হাওয়ার গতিপথ। ফলে ক্রমশ চড়ছে পারদ। দিনে তো বটেই, রাতেও তাপমাত্রার বৃদ্ধি লাগামছাড়া। বুধবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠে গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার তা ছিল ২০.১ ডিগ্রি। এই তাপমাত্রাও স্বাভাবিকের চেয়ে এক ডিগ্রি বেশি। এ দিন আলিপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩.৩ ডিগ্রি। যা স্বাভাবিকের চেয়ে তিন ডিগ্রি বেশি। আকাশ পরিষ্কার থাকায় ফাল্গুনের তুলনায় রোদের তেজ অনেকটাই বেশি। ফলে বেশি গরমের অনুভূতিও।
গ্রীষ্মে যেমন ঝড়-বৃষ্টি দেখতে অভ্যস্ত বাঙালি, ফাল্গুনের শুরুতে তারই এক ঝলক দেখতে চলেছে রাজ্য। পশ্চিমি ঝঞ্ঝার প্রভাবে রবিবার থেকে মেঘ ঢুকবে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের আকাশে। বৃষ্টি চলতে পারে বুধবার পর্যন্ত। তাতে এই মুহূর্তে চলা গরমে লাগাম পড়বে। দিনে তো তাপমাত্রা কমবেই, ঝঞ্ঝার ঝাপ্টা কেটে গেলে সাময়িক ভাবে এক-দু’দিনের জন্য স্বাভাবিকের নীচে নামতে পারে সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও। খুশির খবর রয়েছে পর্যটকদের জন্যও। মঙ্গল ও বুধবার সিকিম ও দার্জিলিংয়ের উঁচু অংশে আরও একদফা তুষারপাত হতে পারে। মাসের শেষপর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে উত্তরবঙ্গে।
মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, উপমহানির্দেশক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘শীতের মরসুমে এক-দু’বার বৃষ্টি হয়েছে দক্ষিণবঙ্গে। তবে সেই বৃষ্টিপাতের চেয়ে এ বারের বৃষ্টির চরিত্রগত ফারাক থাকবে। ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে, যেমন কালবৈশাখীর সময় হয়। বজ্রপাত, শিলাবৃষ্টিও হতে পারে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণও বেশি হবে।’ তাঁর মতে, মূলত তিন ধরনের ক্ষেত্রে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টিপাত হয়। এক, যখন গরম হাওয়া উপরে উঠে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি করে। মূলত গ্রীষ্ম বা প্রাক্ গ্রীষ্মে এমনটা দেখা যায়। যে মেঘ থেকে জন্ম নেয় কালবৈশাখী। দুই, জলীয় বাষ্প পাহাড়ের গা বেয়ে উঠে বজ্রগর্ভ মেঘ সঞ্চারিত করে। তৃতীয় কারণটি হল পশ্চিমি ঝঞ্ঝা।
আবহবিদরা বলছেন, রবিবার থেকেই হাওয়াবদল হতে শুরু করবে। পরিষ্কার আকাশের দখল নেবে মেঘ। ধীরে ধীরে শুরু হয়ে যাবে বৃষ্টি। ক্রমে বাড়বে দাপটও। আলিপুরের এক আবহবিদ জানান, এই মুহূর্তে আফগানিস্তানে রয়েছে একটি পশ্চিমি ঝঞ্ঝা। তার ঠিক পিছনেই আরও একটি শক্তিশালী ঝঞ্ঝা রয়েছে। এই দুয়ের প্রভাবে উত্তর ভারতের উপর একটি ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এমনিতেই ভূমধ্যসাগর থেকে জলীয় বাষ্প নিয়ে কাশ্মীরে ঢোকে ঝঞ্ঝা। তার উপর ঘূর্ণাবর্তের সৌজন্যে আরব সাগর এবং পরবর্তীকালে বঙ্গোপসাগর থেকেও জলীয় বাষ্প ঢুকবে। তাই রবিবার থেকেই মেঘ ঢুকতে শুরু করবে দক্ষিণবঙ্গে। উত্তরবঙ্গে অবশ্য এখন থেকে রোজই বৃষ্টির পূর্বাভাস।