অমর একুশে রক্তের অক্ষরেই লেখা আছে বাংলা ভাষা শহীদদের নাম। বাংলার ওপারের বিধ্বংসী আগুন, অসংখ্য প্রাণহানি শোকের পরিবেশ তৈরি করলেও ভাঁটা পড়েনি একুশের আবেগে। মানুষের উচ্ছ্বাস ও ভালোবাসায় মুছে যায় সীমান্তের কাঁটাতার। এ বারও পেট্রাপোল-বেনাপোলের মাঝে ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’-এ পালিত হল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বনগাঁ পুরসভা, দুই বাংলা মৈত্রী সমিতি, বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতি, ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েত আয়োজিত অনুষ্ঠানে ছিলেন দুই দেশের জনপ্রতিনিধি এবং অগণিত সাধারণ মানুষ। তবে আবেগ-উচ্ছ্বাসে এগিয়ে ছিল ওপার বাংলা।
ভাষা দিবসের মঞ্চ থেকে বাংলাদেশের সাংসদ শেখ আফিরুদ্দিন দুই দেশের সরকারের কাছে আবেদন করেন, ‘কাঁটাতারের বেড়া উঠিয়ে দেওয়া হোক। ভিসা, পাসপোর্ট ছাড়াই যাতে দুই দেশের মানুষ যাতায়াত করতে পারেন।’ এপারের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের গলাতেও একই সুর। উত্তর ২৪ পরগনা সীমান্ত লাগোয়া বসিরহাট মহকুমা ভাষাচর্যা পরিষদের উদ্যোগে রাত ১২টায় মোমবাতি জ্বালিয়ে শুরু হয় শহর পরিক্রমা। শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় সূর্যকান্ত পার্কের শহীদ বেদিতে। সকালে বসিরহাট টাউন হল চত্বরের শহীদ বেদিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বেশ কয়েকটি সংগঠনের বিশিষ্টরা। ইছামতীর পাড়ে টাকি পুরসভা ও নাগরিক মঞ্চের উদ্যোগে শহীদ বেদিতে মালা দিয়ে হয় স্মরণ অনুষ্ঠান।
জিরো পয়েন্টের এক দিকে হয় রক্তদান শিবির। শিবিরে দুই বাংলার মানুষ রক্তদান করেন ভাষার শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানান, “দান করা ওপার বাংলার মানুষের রক্ত চলে আসবে এপারে। এপারের মানুষের দেওয়া রক্ত যাবে ওপারে। দুই বাংলার রক্তে প্রাণ বাঁচবে মুমূর্ষুদের”।
২১শে ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে আটটা। ‘নো ম্যান্স ল্যান্ড’-এ বেনাপোলের দিকে চলে এসেছেন ওপার বাংলার মানুষজন। খুদে স্কুল পড়ুয়া থেকে নবীন-প্রবীণ সকলে। বাংলাদেশের নিরাপত্তা রক্ষীদেরও তখন হিমশিম দশা। ওপারের বড় আচরার গোলাম হোসেন পাবলিক স্কুল থেকে এসেছিল মেম খাতুনের মতো একঝাঁক খুদে পড়ুয়া। তাদের হাতেও জাতীয় পতাকা আর ফুল। ভাষা শহীদ স্মারকে ফুল দেওয়ার দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ালেও বিরক্তি নেই। মারিয়ম মেমোরিয়াল বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসেছিল নবম শ্রেণির ছাত্রী রাবেয়া খাতুন এবং সাদিয়া সুলতানা খাতুন। আগে নিজেদের এলাকায় এই দিনটি উদ্যাপন করলেও এ বারই প্রথম এসেছে ভারত-বাংলাদেশের জিরো পয়েন্টে। রাবিয়ার কথায়, ‘খুব ভালো লাগছে এখানে এসে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পেরে।’