বিয়ের সানাই, ফুলের গন্ধ, লোকজনের হই-হট্টগোল, রঙিন আলো, সবই চলছিল নিয়মমতই। কিন্তু সুরটা কেটে গেল আচমকাই। আইবুড়ো ভাতের রাতে মৃত্যু সংবাদ এল পাত্রের বাবার। এমতাবস্থায় বিয়ে আটকে যাওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই পথে না হেঁটে এক অনন্য দৃষ্টান্ত রাখলেন কালীপাহাড়ির কুমারডিহার বাসিন্দা বাপি বাউড়ি। বাবাকে দাহ করার আগে বিয়ে সম্পন্ন করলেন তিনি। জীবন বাঁচিয়ে দিলেন মেয়েটির।
কালীপাহাড়ির কুমারডিহার বাসিন্দা নবীন বাউড়ির (৫৯) ছেলে বাপির সঙ্গে কুলটির মিঠানি গ্রামের দীপিকা বাউড়ির বিয়ের দিন ছিল বৃহস্পতিবার। তোড়জোড় চলছিল দু’পক্ষেই। আচমকাই বুধবার রাত ৮টা নাগাদ বাপিরা খবর পান, বাড়ি থেকে কয়েকশো মিটার দূরে রেললাইনে পড়ে রয়েছে নবীনবাবুর দেহ। খানিক বাদেই সেই খবর পৌঁছয় পাত্রীর বাড়িতেও। পাত্রের বাড়ির তরফে জানানো হয়, দেহের সৎকার হয়ে গেলে অশৌচ শুরু হয়ে যাবে। তখন বিয়ে হওয়াটা মুশকিলের। তাই বাপি ঠিক করেন, ওই রাতেই বিয়ে সেরে তার পরে বাবার দেহ সৎকার করবেন।
জামাইয়ের পরিকল্পনার কথা জানতে পেরেই ফের শুরু হয় প্রস্তুতি, জানান পাত্রীর বাবা বৃন্দাবন বাউড়ি। তিনি জানান, রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ তাঁদের জানানো হয়, কিছুক্ষণ পরেই বিয়ে হবে। চরম দুঃখ নিয়েও পাত্রীর বাড়িতেও ফের শুরু হয় বিয়ের প্রস্তুতি। বৃন্দাবনবাবু বলেন, ‘‘বেয়াইয়ের মৃত্যুটা কিছুতেই মানতে পারছি না। সব আয়োজন করাই ছিল। শোকের মধ্যেই আমরা শুধু পুরোহিত ডেকে বিয়েটা দিয়েছি।’’
রাত সাড়ে ১১টায় বিয়ের যাবতীয় উপাচার শেষ করে নতুন বউকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন বাপি। দ্রুত এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলে তিনি অবশ্য কোনও কথা বলতে পারেননি। বিয়ের সময়েও তাঁর চোখে দেখা গিয়েছে জল। কথা বলতে পারেননি তাঁর স্ত্রী দীপিকাও। কোনও প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেননি নবীনবাবুর স্ত্রী জ্যোৎস্নাদেবী। ঘটনার খবর পাওয়ার পরে থেকেই তিনি বারবার জ্ঞান হারাচ্ছিলেন। বিয়ের আসরে বরপক্ষ হয়ে এসেছিলেন পাত্রের মামা রঞ্জিত বাউড়ি। তিনি বলেন, ‘‘এমন সময়ে এই মৃত্যু কোনও ভাবেই মানা যায় না। আমরা ভবিষ্যতের কথা ভেবে বিয়েটা যাতে সুষ্ঠু ভাবে হয়, তা দেখেছি।’’