কাশ্মীরের পুলওয়ামায় পাক মদতপুষ্ট জৈশ-ই-মহম্মদের তরফে করা জঙ্গী হামলার পর কূটনৈতিক স্তরে পাকিস্তানকে কোণঠাসা করতে একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারত। শুধু সামরিক দিক থেকেই নয় তাদের একঘরে করে দিতে অর্থনৈতিক দিক থেকে চাপে ফেলার প্রক্রিয়াও চলছে। ইতিমধ্যেই তুলে নেওয়া হয়েছে ‘মোস্ট ফেভারড নেশন’ তকমা। আর এবার তিনটি নদীর জলপ্রবাহ ঘুরিয়ে দিয়ে পাকিস্তানে জল সরবরাহ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিল নয়াদিল্লী।
তিনটি নদী ভারত থেকে পাকিস্তানের দিকে বয়ে চলে। ওই তিনটি নদীর জল আটকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানালেন কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী নীতিন গাডকরি। বৃহস্পতিবার উত্তরপ্রদেশের হরিদ্বারে ‘নমামি গঙ্গে’ প্রকল্পের সূচনা করতে গিয়ে নীতিন গডকড়ি বলেন, ‘পাকিস্তানের দিকে বয়ে গিয়েছে তিনটি নদী। ওই তিনটি নদীর জল এবার যমুনাতে ফেলার প্রক্রিয়া চলছে। ফলে যমুনা নদীতে জলের পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে।’ প্রসঙ্গত, সিন্ধু, ঝিলম ও চন্দ্রভাগা নদীর উৎস ভারতে। এর পরে সেই তিন নদী পাকিস্তানের পানীয় জল সরবরাহের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নেয়। বাঁধ বানিয়ে এই তিন নদীর জল যমুনায় ফেলা হলে পাকিস্তানে জলকষ্ট তৈরি হবে। নীতিন গড়কড়ি গতকাল স্পষ্ট করে দেন যে, ভারত তিন নদীকে যমুনায় মিশিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা থেকে সরছে না।
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ভারতের তিনটি নদী বিপাশা, ইরাবতী এবং শতদ্রুর জলপ্রবাহ ঘুরিয়ে দেওয়া হবে। ওই তিনটি নদীর গতিপথেই বাঁধ ও অন্য প্রকল্প নির্মাণ করা হবে। গাডকরি জানিয়েছেন, ওই অতিরিক্ত জল পাবে জম্মু ও কাশ্মীর এবং পাঞ্জাবের মানুষ। প্রসঙ্গত, স্বাধীনতা ও দেশভাগের পর ভারতের অংশে পড়া ওই তিন নদীর জলের ৯৪ শতাংশ ভারত একাই প্রায় ব্যবহার করে। বাকি অংশ অব্যবহৃত। সেই জলপ্রবাহ যায় পাকিস্তানে। সিন্ধু জল চুক্তি অনুযায়ী, ভারতের প্রাপ্য জলের অতিরিক্ত অংশ ভারত কী করবে, তা তারাই ঠিক করতে পারে। এমন নয় যে ওই জল পাকিস্তানে প্রবাহিত করতে ভারত বাধ্য। কিন্তু সেই জলপ্রবাহ বন্ধ করা হয়নি। এবার সেই চরম পন্থাই নিচ্ছে ভারত। যার ফলে ওই তিন নদীর পার্শ্বস্থ যেসব গ্রাম, জনপদ, কৃষিজমি পাকিস্তানের অংশে রয়েছে, সেই অংশে সম্পূর্ণ শুষ্ক হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। যা পাকিস্তানের পূর্ব প্রান্তের কৃষি ও সেচে বিপুল প্রভাব ফেলতে পারে।
উল্লেখ্য, পুলওয়ামার হামলার পরই সর্বাগ্রে ভারত বন্ধ করে দিয়েছিল বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে দেওয়া মোস্ট ফেভারড নেশনের সুবিধা। একইসঙ্গে পাকিস্তান থেকে ভারতে আসা পণ্যগুলির উপর ভারত শুল্ক বৃদ্ধি করেছে ২০০ শতাংশ। ফলে করাচি বন্দরে এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে সার দিয়ে ট্রাক ও জাহাজভর্তি পণ্য দাঁড়িয়ে আছে। সেগুলি ভারতে আনা সম্ভব হচ্ছে না। বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক ভাবে ধাক্কা দেওয়ার পর এবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জলযুদ্ধ ঘোষণা করল ভারত।