এবার জাল মার্কশিট কান্ডে জালিয়াতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য দিলীপ সিনহা-সহ মোট তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে। যাদের মধ্যে রয়েছেন প্রাক্তন কর্মসচিব দিলীপ মুখোপাধ্যায়ও। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এই মামলা চলার পর বুধবার বোলপুর আদালতের অ্যাডিশনাল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অরবিন্দ মিশ্র তাঁদের দোষী সাব্যস্ত করেন। আজ আদালত তাঁদের ৫ বছরের কারাদন্ড ঘোষণা করেছে।
বিশেষ সরকারি আইনজীবী নবকুমার ঘোষ বলেন, ‘বোলপুর আদালত এই মামলায় বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য দিলীপ সিনহা, প্রাক্তন রেজিস্ট্রার দিলীপ মুখোপাধ্যায় এবং অধ্যাপিকা মুক্তি দেবকে ষড়যন্ত্র ও জালিয়াতির বিভিন্ন ধারায় দোষী সাব্যস্ত করেছেন। মুক্তি দেবের বিএস সি পার্ট ওয়ান এবং পার্ট টু ছাড়াও এম এস সি পার্ট ওয়ান এবং পার্ট টুয়ের জেরক্স মার্কশিটে দিলীপ সিনহার সই রয়েছে।’
প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালে বিশ্বভারতীতে তপশীলি জাতি, উপজাতি সংরক্ষণের আওতায় অ্যাপ্লায়েড ম্যাথামেটিক্সের অধ্যাপক পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ওই পদের জন্য অন্য অনেকের মতো মুক্তি দেবও আবেদন করেন। সেই আবেদনপত্রের সঙ্গে যে মার্কশিটের জেরক্স তিনি জমা দেন, তাতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাসবিহারী চেয়ার প্রফেসর হিসাবে দিলীপ সিনহার সই ছিল। তবে সইয়ের নিচে কোনও তারিখ দেওয়া ছিল না।
বিশ্বভারতীর তৎকালীন সিলেকশন বোর্ড ওই পদের জন্য দু’জনের নামের প্যানেল প্রকাশ করে। যার মধ্যে প্রথম নাম ছিল মুক্তি দেবের, দ্বিতীয় নাম ছিল নন্দলাল বৈরাগ্য। প্রস্তাবিত প্যানেল অনুযায়ী, ১৯৯৭ সালের ২৭ জানুয়ারী বিশ্বভারতীর অধ্যাপিকা পদে নিযুক্ত হয়েছিলেন মুক্তি দেব। আদালত সূত্রের খবর, ২০০২ সালে আচমকা অধ্যাপিকা মুক্তি দেব পিএইচডি করতে আবেদন করেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের কাছে। বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে আসল মার্কশিট-সহ সমস্ত নথি জমা দিতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু হঠাৎ করে তিনি পিএইচডি করার আবেদনপত্র প্রত্যাহার করে নেন।
এরপর তৎকালীন উপাচার্য সুজিতকুমার বসু বিষয়টি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে জানতে চায় মুক্তি দেবের শিক্ষাগত যোগ্যতার নথিগুলি আসল কিনা। কিছুদিনের মধ্যেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিশ্বভারতীকে জানানো হয় মুক্তি দেব বিএসসি পার্ট ওয়ান অনার্স পরীক্ষা বসলেও পাশ করতে পারেননি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও একই তথ্য দেওয়া হয়। এর থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায় অধ্যাপিকা মুক্তি দেবের স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের সমস্ত শংসাপত্র ভুয়ো।
এই তথ্য হাতে আসার পর বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্তের পর মুক্তি দেবকে সাসপেন্ড করার পাশাপাশি শো-কজও করা হয়। উত্তরে অভিযুক্ত অধ্যাপিকা তিনটি চিঠি জমা দেন। যার মধ্যে প্রথম চিঠিতে ঘুরিয়ে তিনি নিজের দোষ স্বীকার করে নেন। আবার দ্বিতীয় চিঠিতে অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেন। কিন্তু তৃতীয় চিঠিতে ফের প্রথম চিঠির পুনরাবৃত্তি করেন।
এরপর সমস্ত তথ্য বিশ্বভারতীর সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক কমিটি কর্ম সমিতির কাছে জমা দেন কর্তৃপক্ষ। কর্ম সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অধ্যাপিকাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। ২০০৪ সালের মে মাসে তৎকালীন কর্মসচিব সুনীল সরকারের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়। জুন মাসে মুক্তি দেব এবং প্রাক্তন উপাচার্য দিলীপ সিনহা গ্রেফতার হন। কিছুদিন পর সিআইডি ঘটনার তদন্ত শুরু করে। এবং ২০০৫ সালের মার্চ মাসে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেয় তারা।