লোকসভা ভোটের মুখে এবার আবারও ‘সুপ্রিম’ ভর্ৎসনা জুটল কেন্দ্রের কপালে। সাধারণ মানুষ কীভাবে আসাম সরকারের ওপর আস্থা রাখবে? এই প্রশ্নই তুলল খোদ সুপ্রিম কোর্ট। নাগরিকপঞ্জী ও ডিটেনশন কেন্দ্র গুলো নিয়ে মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ এর বেঞ্চে রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়ে কেন্দ্র ও আসাম সরকার। বছরের পর বছর কিভাবে ডিটেনশন কেন্দ্রগুলোতে আটকে থাকতে হচ্ছে ‘বিদেশি’ বলে চিহ্নিত মানুষকে, কেন তাঁদের নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে না, সেই নিয়েই শীর্ষ আদালতে প্রশ্নবাণে বিদ্ধ হয় সরকার।
ডিটেনশন কেন্দ্রগুলোতে কতজনকে আটকে রাখা হয়েছে, কী অবস্থা কেন্দ্রগুলির, এই ব্যাপারে দশ বছরের তথ্য জমা দেওয়ার জন্য ২৮ জানুয়ারি নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। কেন্দ্র ও আসাম
সরকারের পক্ষ থেকে হলফনামা জমা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্র জানিয়েছে, ৬টি কেন্দ্রে এখন ১৩৮ জনকে আটকে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ৮২৩ জনকে বিদেশি বলে ঘোষণা করেছে ট্রাইব্যুনাল। ২৭,০০০ বিদেশিকে অনুপ্রবেশের সময় না নিয়ে মরতে পাঠানো হয়েছে। তবে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা সরকারের বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে পদে পদে বিচারপতিদের প্রশ্নেএ মুখে পড়েন।
প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ বলেছে, ট্রাইব্যুনাল ৫২ হাজার মানুষকে বিদেশি বলে ঘোষণা করেছে, যার মধ্যে মাত্র ১৬২ জনকে ফেরত পাঠাতে পেরেছে সরকার। ফেরত পাঠানোর বিষয়টিতে কী করা হবে, তা কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, বিদেশ মন্ত্রক এবং রাজ্য সরকারকে একসঙ্গে বসে ঠিক করে আদালতকে জানাতে হবে। ১৩ মার্চ রয়েছে পরের শুনানি। সেইসঙ্গে রাজ্য ও কেন্দ্রের অস্বস্তি বাড়িয়ে দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ৩১ জুলাইয়ের মধ্যেই প্রকাশ করতে হবে এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকা।
লােকসভা ভােটের ব্যস্ততার কারণে এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন করেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট সেই আর্জি খারিজ করে দিয়ে জানিয়েছে, নির্বাচন ও এনআরসি প্রক্রিয়া সমান্তরালভাবেই চলবে। এর আগে ৫ ফেব্রুয়ারিও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এনআরসি-র সময়সীমা বাড়ানাের আবেদন করে ধমক খেয়েছিল। গতকালও সর্বোচ্চ আদালত মন্তব্য করে, ‘এক-একবার এক-একটা বাহানা নিয়ে আসা হচ্ছে। আর এর থেকে আমাদের ধারণা, গােটা প্রক্রিয়াটিকেই ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে।’
নাগরিকত্ব সংশােধনী আইন পাশ করাতে গিয়ে এমনিতেই বিপাকে বিজেপি। আসামে এর জেরে জোটও ভেঙেছে তাদের। রবিবার আসামে হিন্দু অধ্যুষিত লখিমপুরে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের হুঙ্কার দিয়েছিলেন, ফের ক্ষমতায় এলে তাঁরা হিন্দুদের জন্য আইন করবেন। এর জেরে ফের ছড়িয়েছে অসন্তোষ। আসাম জাতীয়তাবাদী যুব ছাত্র পরিষদ অমিত শাহের কুশপুতুলও পোড়ায়।