‘গত লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মােদী পেয়েছিলেন মাত্র ৩১ শতাংশ ভােট। তবু তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার করতে পেরেছিলেন বিরোধীদের অনৈক্যের জন্য। তবে এবার বিরোধীরা একজোট। আসন্ন লােকসভা ভােটে ‘ফ্যাক্টর’ সেটাই। মােদী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সফল না ব্যর্থ, তার ওপর ভােট হবে না। যদি তিনি নিজের আগের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতেও পারেন, তা হলেও এবার তাঁর জেতা শক্ত। জিততে হলে বিরােধী জোট ভাঙার খেলাটাই এবার মােদীকে খেলতে হবে।’ বলছেন আন্তর্জাতিক লগ্নিকার ও লেখক রুচির শর্মা।
তাঁর সদ্য প্রকাশিত বই ‘ডেমােক্রেসি অন্য দ্য রােড: এ টোয়েন্টি ফাইভ ইয়ার জার্নি ইন্ডিয়া’-তে রুচির দেখাতে চেয়েছেন, গত আড়াই দশকে গােটা দেশ এবং বিভিন্ন রাজ্য কীভাবে ভােট দিয়েছে। সেই পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতেই রুচির বলছেন, গ্রামীণ ভারত মনস্থির করে ফেলেছে। ভােট দেওয়ার সময় সেই মনােভাবের হেরফের হবে না। এখন বিরােধী জোট কী অবস্থায় থাকে, সেটাই দেখার। জাতীয় স্তরে মহাজোট হয়তো হবে না, কিন্তু রাজ্যভিত্তিক জোট হবে। আর জোট রাজনীতি আদতে সমাজের প্রতিফলন।
এবার কি বিজেপির ভােট বাড়বে? রুচির বলছেন, সে সম্ভাবনা কম। বিজেপি যদি ফের ক্ষমতায় আসেও, তাদের জোট সঙ্গীদের ওপর বেশি নির্ভর করতে হবে। সেই ভরসায় নরেন্দ্র মোদীর জয়ের সুযোগ ৫০:৫০ দেখছেন রুচির। এর মূলে ২০১৮ সালে তিন রাজ্যের বিধানসভা ভোটে বিজেপির হার। ওই ফলাফলের উল্লেখ করে তাঁর বিশ্লেষণ, ‘নেতাদের ঠিক এই পরিস্থিতিতে দেখতে পছন্দ করেন ভােটদাতারা। একেবারে খাদের কিনারায়। ক্ষমতা যায় যায়। ভোটদাতাদের হেলাফেলা করলে যা হয় আর কি!’
২৫ বছর ধরে নির্বাচনমুখী রাজ্যে ঘুরে ঘুরে ভোটদাতাদের মন বুঝেছেন রুচির। নেপাল সীমান্ত লাগোয়া মাওবাদী উপদ্রুত অঞ্চল থেকে তামিলনাড়ুর একেবারে দক্ষিণ প্রান্ত, সব ঘুরেছেন তিনি। সেই সব অভিজ্ঞতার ফসল ‘ডেমোক্রেসি অন দ্য রোড’। এই লোকসভা নির্বাচন নিয়ে কিছু উল্লেখযোগ্য মন্তব্যও করেছেন তিনি। যেমন, ২০১৯-র নির্বাচন মােদী বনাম বাকি সবাই। এক বাহুবলীর ক্ষমতা, গণতন্ত্রের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতার ওপর জনতার রায়।’ পেঙ্গুইন র্যান্ডম হাউস প্রকাশিত বইয়ে রুচির লিখেছেন, ‘গত কয়েক বছরে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে। তবে মােদীর মতাে বৃহৎ প্রতিপক্ষকে হারাতে যতদূর সম্ভব অন্যদের সাহায্য নিতে হবে তাঁকে।’
রুচির এ-ও লিখেছেন যে, ‘গত ১৮ মাসে পরপর নির্বাচনে হার দেখেছেন মােদী। তাতে ২০১৯-এ তাঁর জয়ের সুযোগ কমে ৫০:৫০-এ দাঁড়িয়েছে।’ রুচির জানিয়েছেন, ২০১৪-র মতো এবারও এক-তৃতীয়াংশ ভোট পেতে পারে বিজেপি। তবে তা সত্ত্বেও লোকসভায় তাদের অধিকাংশ আসন হারাবে তারা। লড়াই খুবই কঠিন হবে। গণতন্ত্র যখন সারা বিশ্বে পিঠটান দিচ্ছে, ভারতে তা ভীষণভাবে বেঁচে।’ তাঁর মতে, লােকসভা নির্বাচনে রাজ্যে রাজ্যে জোরদার লড়াই হবে। যার ফলে ভোটের রাজনীতি আরও জমবে।