কাশ্মীরের পুলওয়ামায় হওয়া জঙ্গী হামলার জেরে গোটা দেশজুড়েই পাকিস্তান বিরোধীতা এবং সে দেশের প্রতি ক্ষোভ-বিক্ষোভ তীব্র হচ্ছে। সেই ক্ষোভের আঁচে পাকিস্তানি নাগরিকদের ওপর হামলা বা অশান্তি ছড়ানোর আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তাই সময় মাত্র ৪৮ ঘণ্টা। তার মধ্যেই তল্পিতল্পা গুটিয়ে ফিরে যেতে হবে নিজের দেশে। রাজস্থানের বিকানিরে পাকিস্তানিদের উদ্দেশ্যে এবার এমনই কড়া নির্দেশ জারি করল জেলা প্রশাসন। ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৪ ধারায় সোমবার এই নির্দেশিকা জারি করেছেন জেলাশাসক কুমার পাল গৌতম। তবে বিকানিরে বসবাসকারী পাক নাগরিকরাই নয়, সোমবার জেলাশাসকের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ফিরে যেতে হবে পাকিস্তান থেকে আসা পর্যটকদেরও।
ভারত-পাক সীমান্ত শহর রাজস্থানের বিকানির। সেই সুবাদে শহরে প্রচুর পাকিস্তানি নাগরিক আসেন। ব্যবসা-বাণিজ্য-সহ নানা কারণে পাকিস্তানিদের ভিড় লেগেই থাকে। কিন্তু পুলওয়ামায় পাক মদত পুষ্ট জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গীদের আত্মঘাতী হামলায় ৪৯ সিআরপিএফ জওয়ানের মৃত্যুর পর থেকে সারা দেশেই পাকিস্তানবিরোধী ক্ষোভ তীব্র হচ্ছে। দেশজুড়ে জ্বলছে বিদ্রোহের আগুন। প্রশাসন সূত্রে খবর, এমন পরিস্থিতিতে পাক নাগরিকরা থাকলে যে কোনও মুহুর্তে অশান্তির আঁচ ছড়িয়ে পড়তে পারে গোটা শহরে। ভেঙে পড়তে পারে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও। তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শহর জুড়ে বাড়ানো হয়েছে সতর্কতা। এমনকি বেশ কয়েকটি জায়গায় জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা।
সোমবার জেলাশাসকের তরফ থেকে নির্দেশিকা জারি করে বলা হয়েছে, পাকিস্তান থেকে ভারতে এসে যাঁরা বিকানিরে স্থায়ী ভাবে বসবাস করছেন আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের ফিরে যেতে হবে নিজেদের দেশে। হোটেল, লজে যে সব পাক পর্যটকরা রয়েছেন, ফিরে যেতে হবে তাঁদেরও। কোনও আত্মীয়ের বাড়িতেও পাকিস্তানি নাগরিকদের নতুন করে থাকতে দেওয়া যাবে না। পাক নাগরিকদের সঙ্গে কোনও রকম ব্যবসায়িক সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রেও জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। এমনকি পাকিস্তানি নাগরিকদের কাজ দেওয়াও পুরোপুরি নিষিদ্ধ।
নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে যে, সোশ্যাল মিডিয়ায় পাক নাগরিকদের সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ ছিন্ন করতে হবে স্থানীয়দের। পাকিস্তানি নাগরিকদের সঙ্গে ভারতীয় সেনা সম্পর্কিত কোনও তথ্য বা পুলওয়ামায় নিহত শহীদ জওয়ানদের নিয়ে কোনও রকম স্পর্শকাতর পোস্ট ও খবর আদান প্রদান করা যাবে না। পাশাপাশি, মোবাইল-টেলিফোনে পাকিস্তানের নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলার ওপরও কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এমনকি, বিকানেরে ব্যবহার করা যাবে না পাকিস্তানের সিম কার্ড।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, পাকিস্তান থেকে ফোন করে বা সোশ্যাল মিডিয়ার সূত্র ধরে বিকানিরবাসীকে ব্যঙ্গ , বিদ্রুপ, উপহাস করা হচ্ছে। এমনকি নানা উস্কানিমূলক মন্তব্যও করা হচ্ছে। যার জেরে অশান্তি ছড়িয়ে পড়তে পারে যে কোনও সময়েই। সেই কারণেই টেলিফোনে পাক নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলা বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখা এবং ব্যবসা-বাণিজ্য বা অন্য কোনও রকম লেনদেনের উপরেও পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বিকানির শহরের কেউ পাকিস্তানি সিম কার্ডও ব্যবহার করতে পারবেন না। তবে ভারতে এসে যাঁরা ফরেনার্স রেজিস্ট্রেশন অফিসার বা বিদেশি নিবন্ধক আধিকারিকের কাছে নাম নথিভুক্ত করেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই নির্দেশ প্রযোজ্য হবে না। প্রশাসন এই নির্দেশ প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত আগামী দু’মাস এই নির্দেশিকা জারি থাকবে বলে জানানো হয়েছে। কেউ আইন ভঙ্গ করলে তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৮৮ ধারায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে ওই নির্দেশিকায়।