কাশ্মীরে পুলওয়ামায় জঙ্গী হানার ঘটনার দায় মাথায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ইস্তফা দেওয়া উচিৎ ছিল বলে মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নবান্নে একটি সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বলেন, ‘বৃহস্পতিবার পুলওয়ামাতে ৪৯ জওয়ান নিহত হলেন। এদিকে, এমন হামলা হতে পারে বলে ‘ইন্টেলিজেন্স ইনপুট’ মিলেছিল গত ৮ ফেব্রুয়ারি। তা সত্ত্বেও কোনও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন? একসঙ্গে এত সেনাকে একটি কনভয়ে নিয়ে যাওয়া হল কেন? এয়ার লিফট বা ট্রেনে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হয়নি কেন? সিআরপিএফ যাওয়ার রাস্তায় আগে থেকে ‘স্যানিটাইজেশন’ করা হয়নি কেন? এখন ওঁরা বড় বড় কথা বলে যাচ্ছে। ওদের উচিৎ দায় মাথায় নিয়ে ইস্তফা দেওয়া’।
বিজেপি, আরএসএস ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করে মমতা বলেন, ‘পুলওয়ামার ঘটনার নিন্দা আমরা সবাই করেছি। বিরোধীরা সবাই সরকারের সঙ্গে আছি, এই বার্তাও দিয়েছি। খুব শীঘ্রই আমরা, বিরোধীরা একসঙ্গে বৈঠকে বসে পাকিস্তান নিয়ে আমাদের মতামত দেব। কিন্তু গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে অন্য জিনিস দেখছি। সবাইকে দেশ বিরোধী বলে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, পাক প্রেমী। এ আবার কী? যেন মনে হচ্ছে ওঁরাই একমাত্র দেশপ্রেমিক। বাকি সবাই দেশদ্রোহী। দেশপ্রেমের নামে রাজ্যে দাঙ্গা বাধানোর চক্রান্ত করছে বিজেপি-আরএসএস’।
দেশপ্রেমের নামে গেরুয়া শিবির রাজ্যে রাজ্যে দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘রাত ১২-১টার সময় জাতীয় পতাকা নিয়ে বিজেপি, আরএসএস, ভিএইচপি’র কিছু মানুষ রাস্তায় বের হচ্ছেন। বাইরে থেকে আরএসএসের প্রচারকরা এসে দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা করছেন। এই বহিরাগতরাই হিন্দু, মুসলমান, শিখ, খ্রিস্টানের মধ্যে বিরোধ বাধিয়ে দাঙ্গা লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে’। মমতা বলেন, ‘গতকাল কলকাতায় এরকম গোলমালের চেষ্টা হয়েছে। পুলিস তা বাড়তে দেয়নি। বেহালাতেই একটি ঘটনা ঘটেছে। শ্রীরামপুরে একটি জলসায় আরএসএস-বিজেপি গোলমাল পাকিয়েছে। বনগাঁতে গোলমাল হয়েছে। এই সব গোলমালের পিছনে হাত রয়েছে বিজেপি-আরএসএসের। কিন্তু মনে রাখবেন, বাংলা একটি শান্তিপূর্ণ রাজ্য। বাংলায় সব ধর্ম, বর্ণ, জাত, সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্যের পরিবেশ রয়েছে। বাংলার সংস্কৃতি আলাদা। শুধু এখন নয়, ১০০ বছর আগে ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় হিন্দু-মুসলমানকে একসঙ্গে নিয়ে পথে নেমেছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সব ধর্ম-জাত ঐক্যবদ্ধ থাকাটাই অমাদের পরম্পরা। সেই পরম্পরাকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হচ্ছে’।
বাংলার সব মানুষের কাছে আবেদন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা ধরনের ফেক নিউজ, গুজব ছড়ানো হচ্ছে। সবার কাছে আমার আবেদন, প্ররোচনা দিয়ে, কুৎসা করে দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা চলছে। আমরা যেন এই প্ররোচনায় পা না দিই। আমি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি, দাঙ্গার মতো পরিস্থিতি দেখে এক মুহূর্তও চুপ করে বসে থাকা যাবে না। কড়াভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। প্রশাসনের পাশাপাশি সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ, ক্লাব, এনজিও, রাজনৈতিক দলকে অনুরোধ করব এই দিকে নজর দিতে’।