পুলওয়ামা কাণ্ড নিয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মোদী জামানায় লোকসভার শেষ অধিবেশনের পর এরকম ঘটনা ঘটায় নাগরিক হিসাবে সন্দেহ প্রকাশ করে মমতা প্রশ্ন তোলেন, ‘পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা এতদিন কেন নেওয়া হয়নি?’
পুলওয়ামা কাণ্ড ও তার পরবর্তী তদন্ত, রাজনৈতিক স্তরে বৈঠক, উত্তেজনার পরিবেশ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আজ সোমবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক প্রশ্ন তোলেন মমতা। তাঁর প্রশ্ন, ‘পাঁচ বছর হয়ে গিয়েছে (মোদী সরকারের), কই কিছু তো হয়নি। বরং কখনও কখনও আমার মনে হয়েছে, পাকিস্তান আমাদের এতো বন্ধু হয়ে গেল’! এরপরেই মমতা প্রশ্ন তোলেন, ‘ভোটের আগে তারা এ রকম করার সাহস পেল কোথা থেকে? আমি জানি না কেন? তবে পার্লামেন্টের পর (মোদী জমানায় লোকসভার শেষ অধিবেশনের পর) যদি এরকম ঘটনা ঘটে, নাগরিক হিসাবে আমার মনে সন্দেহ হয়। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা এতদিন কেন নেওয়া হয়নি’?
প্রসঙ্গত, মোদী আমলের পাঁচ বছরের দিকে চোখ রাখলে দেখা যাবে, নরেন্দ্র মোদী পড়শি পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্কই রাখতে চেয়েছিলেন। মোদীর প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। এমনকী নওয়াজের বাড়িতে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতেও দুম করে রাওয়ালপিণ্ডি পৌঁছে গিয়েছিলেন মোদী। অথচ পুলওয়ামা হামলার পর সেই মোদীই উত্তপ্ত বক্তৃতায় জাতীয়তাবাদের হাওয়া বিজেপির পালে টানার চেষ্টা করছেন মোদী। ইসলামাবাদের সঙ্গে মোদীর সেই পুরনো সম্পর্ক নিয়ে খোঁচা দিয়ে এদিন মমতা বলেন, ‘কখনও কখনও মনে হয়েছে পাকিস্তান আমাদের এতো বন্ধু হয়ে গেল কী করে?’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মোদী সরকারের সঙ্গে ইসলামাবাদের পুরনো খেলা ভেস্তে দিতেই এই তির্যক মন্তব্য করেছেন মমতা।
পুলওয়ামা কাণ্ডের নেপথ্যে গোয়েন্দা ব্যর্থতা নিয়েও এদিন সরব হন মমতা। তাঁর কথায়, ‘সেনা বা আধা সামরিক বাহিনীর উপর যে এ ধরনের আঘাত হানা হতে পারে, সেই আগাম আশঙ্কা তো ছিলই। এ ব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্যও ছিল। কিন্তু তাও কেন হামলা ঠেকানো গেল না, তার জবাব দিতে হবে’। মমতার আরও প্রশ্ন, ‘ওই তথ্য থাকার পরেও জম্মু-শ্রীনগর হাইওয়েতে কেন নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করা হয়নি? কেন অতো বড় বাহিনীকে সড়ক পথে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল? কেন বিমান বা ট্রেন ব্যবহার করা হয়নি?’ বিজেপির সঙ্গে আরএসএস-কেও তুলোধোনা করে মমতা বলেন, ‘পুলওয়ামা কাণ্ডকে সামনে রেখে গোটা দেশে বিজেপি ও আরএসএস জাতীয়তাবাদের জিগির তুলতে চাইছে। এমন ভাব করছে, ওরাই একমাত্র দেশপ্রেমী, বাকিরা দেশদ্রোহী। আর তার মাধ্যমে ওরা দেশে দাঙ্গা বাঁধাতে চাইছে’।