পুলওয়ামায় বীভৎস জঙ্গী হানার ঘটনায় শোক বিহ্বল গোটা দেশ। বিস্ফোরণে শহীদ হয়েছেন ৪৪ জন সিআরপিএফ জওয়ান। নিরাপত্তার ফাঁক গলে কীভাবে এত বড় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল সেই নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। এই পরিস্থিতিতে মোদী সরকারের ওপর ক্ষোভ উগড়ে দিলেন শহীদ জওয়ানের পরিবার।
উত্তরপ্রদেশের কনৌজ জেলার আজান গ্রামের বাসিন্দা সিআরপিএফ জওয়ান প্রদীপ সিং এই ভয়াবহ জঙ্গী হামলাতে প্রাণ হারিয়েছেন। এর পেছনে মোদী সরকারের ব্যর্থতাকেই দায়ী করছেন শহীদের পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা সাফ জানিয়ে দিলেন, অনেক হয়েছে, আর মোদী ও তাঁর সরকারকে আর বিশ্বাস করছি না।
জঙ্গী দমনে মোদী সরকারের কার্যকলাপ নিয়ে হতাশ শহীদ জওয়ান প্রদীপ সিংয়ের স্ত্রী নীরজ সিং। একটি সর্বভারতীয় বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছিলেন জওয়ানদের আত্মত্যাগ বিফলে যাবে না। কিন্তু আমরা আর তাঁকে ও তাঁর সরকারকে বিশ্বাস করছি না। এর আগেও কাশ্মীরে একাধিকবার জঙ্গী হানার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কখনওই এর মোকাবিলায় নিরাপত্তা বাহিনীকে ফ্রি হ্যান্ড দেওয়া হয়নি। অনেক আগেই উপত্যকার পাথরবাজদের কড়া হাতে দমন করা উচিৎ ছিল’। কান্না জড়ানো কন্ঠে নীরজ বলেন, ‘সরকার যদি এখন আতঙ্কবাদের বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ নেয়ও, তারপরেও আমরা আর প্রদীপকে ফিরে পাব না’।
শহীদ জওয়ানের বাবা অমর সিং অবসরপ্রাপ্ত সাব ইন্সপেক্টর। এমন ঘটনা নিয়ে সরকার বরাবর রাজনীতি করে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। অমরবাবু বলেন, ‘সরকার কোনওদিনই জওয়ানদের বলিদানকে গুরুত্ব দেয়নি। আমার ছেলের এই আত্মত্যাগের কথাও জনতা দু-তিন দিনের মধ্যে ভুলে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়বে’। তাঁর কথায়, ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক নিয়ে মোদী সরকার একটা হাইপ তৈরি করলেও জঙ্গী হামলার ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না। এই দেশে যারা জঙ্গী হামলার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে তাদের এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলিকে এক হয়ে কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে’।
মা সরোজিনী দেবীর কান্না থামছে না। ছেলের এমন ভয়াবহ মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি। কাঁদতে কাঁদতেই সরোজিনী বলেন, ‘বাচ্চাবেলা থেকেই আমার ছেলে দেশসেবার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইত। কিন্তু তার এমন মর্মান্তিক পরিণতি আমরা ভাবতে পারছি না। প্রদীপের স্ত্রী অভিভবাকহীন হয়ে গেলেন। দুই সন্তান তাঁদের পিতাকে হারাল। ওঁকে ছাড়া দিন কাটানো আমাদের কাছে অসম্ভব’।
শহীদ প্রদীপ সিংয়ের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের সমবেদনা জানিয়েছেন সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব। অর্থ সাহায্যেরও ঘোষণা করেছেন তিনি। কিন্তু এতে সন্তুষ্ট নন প্রদীপের ভাই কুলদীপ সিং। তিনি বলেন, ‘রাজ্য সরকারের এই অর্থসাহায্য আমার ভাইয়ের জীবনের চেয়ে দামী হতে পারে না। সরকার আতঙ্কবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘস্থায়ী ব্যবস্থা না নিলে এমন ভাবে আরও অনেক বীর জওয়ানের প্রাণ যাবে’।