রক্তে পিচ্ছিল পথ, বাতাসে তীব্র পোড়া গন্ধ, রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা দেহাংশ এবং প্রিয়জন হারানোর যন্ত্রণা – গতকাল পুলওয়ামাতে ঘটে যাওয়া ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণের পরে চিত্রটা থিক এমনই। যার রেশ পৌঁছে গেছে বাংলা থেকে রাজস্থান, রাজস্থান থেকে বিহার। কেউ সন্তান হারানোর যন্ত্রণায় বিদ্ধ হলেন, কেউ স্বামীহারা হলেন, কেউ বা বাবা শব্দের অর্থ বোঝার আগেই হারিয়ে ফেলল বাবাকে। জঙ্গিদের হানায় ৪২ জওয়ানের মৃত্যুর পর জীবন থেমে গেছে এভাবেই। রাজনৈতিক তর্জা চলছে, চলছে সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রতিবাদ, ধিক্কার, সমবেদনা জানানোর পালা। আজকের মধ্যেই সব জওয়ানেরা শেষবারের মত বাড়ি ফিরবেন। এই আবহেই অত্যন্ত মানবিকতার নিদর্শন দেখালো আমি-মিত। নিজেদের বিয়ের বরাদ্দ থেকে ১৬ লক্ষ টাকা শহীদদের জন্যে দান করলেন তাঁরা।
আজ সুরাটে ধুমধাম করে বিয়ে হবার কথা ছিল আমি এবং মিতের। দুই পরিবারের পক্ষ থেকেই জাঁকজমক পূর্ণ আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু গতকালের এই বিস্ফোরণ বদলে দিয়েছে সবকিছু। এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে এত সাড়ম্বরে বিয়ের মানসিকতা হারিয়ে ফেলে তাঁরা।
তখনই তাঁরা সিদ্ধান্ত নেয়, বিয়ের বরাদ্দ টাকা থেকে ১১ লাখ টাকা দান করবে শহীদদের পরিবারে। আর বাকি ৫ লাখ টাকা বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা যারা সেনাবাহিনীর জন্যেই কাজ করে। তড়িঘড়ি কার্ড ছাপিয়ে সমস্ত আমন্ত্রিত অতিথিদের জানিয়ে দেওয়া হয় নৈশভোজ বাতিলের কথা। তাঁরা জানায় শুধু খুব সাধারণভাবে বিয়েটা করতে চায়। না রাগ করেন নি কেউই বা ক্ষুণ্ণও হননি কেউই। বরং আমি-মিতের ওপরে অকুণ্ঠ আশীর্বাদ বর্ষণ করেছেন সকলে। যে সময়ে দাঁড়িয়ে মানুষ মানবিকতা ভুলে যাচ্ছে, হিংসা-হানাহানিতে মত্ত হচ্ছে তখনও যে কিছু মানুষ এখনও মান-হুঁশ নিয়ে বাঁচে, তার প্রমাণ আমি-মিত।