কাশ্মীরে জঙ্গী হামলার খবর পাওয়ার পরেও নির্বাচনী প্রচার! হ্যাঁ, গতকাল বিস্ফোরণে ৪৪ জওয়ান মৃত্যুর ঘটনায় যখন শোকাহত গোটা দেশ। তখনও নির্বাচনী ভাষণ দিতে ব্যস্ত দেশের প্রধানমন্ত্রী, সরকারে থাকা দলের সর্বভারতীয় সভাপতি এবং বিজেপি শাসিত এক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী! যেখানে বিজেপির নেতানেত্রীরা বারবারই দাবি করে থাকেন কাশ্মীর নিয়ে তাঁরা যথেষ্ট ভাবিত, সেখানে গতকালের ঘটনাই প্রমাণ করে দেয় যে, আদতে এ-ও বিজেপির এক ‘জুমলা’।
ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মোদী সরকারের দাবি ছিল, বিজেপি জমানায় উপত্যকা শান্ত৷ সেখানে কোথাও কোনও সমস্যা নেই৷ এই বক্তব্য যে কতটা ভুয়ো, উরির পর তা পুলওয়ামায় ফের নিজেদের প্রাণ দিয়ে প্রমাণ করলেন শহীদ জওয়ানেরা৷ কাশ্মীরের পুলওয়ামার অবন্তীপোরায় বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ শ্রীনগর-জম্মু হাইওয়েতে সিআরপিএফ কনভয়ে হামলা চালায় জঙ্গীরা। ঘটনায় নিহত হন ৪৪ জওয়ান৷ এই ঘটনায় দেশের নিরাপত্তা নিয়ে মোদী সরকারের ব্যর্থতা আবারও প্রকাশ্যে চলে এল৷ এর পাশাপাশি আরেকটি তথ্যও উঠে এল গতকাল। কাশ্মীরের জঙ্গী হামলার ঘটনায় মোটেই বিচলিত নয় বিজেপি!
বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ অবন্তীপোরায় হামলা চালায় জঙ্গীরা। সংবাদ সংস্থা এএনআই তাদের টুইটার হ্যান্ডেলে সেই খবর প্রকাশ করে বিকেল ৪টে ৪৮ নাগাদ। এর মধ্যেই স্বাভাবিকভাবে দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে সেই খবর চলে আসার কথা। কিন্তু তারপরেও দলের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচী উত্তরাখন্ডের রুদ্রপুরের র্যালির উদ্দেশ্যে মোবাইল ফোন মারফত ভাষণ দিতে দেখা যায় তাঁকে। বিকেল ৫টা ১৮য় সেই খবরও জানায় এএনআই। শুধু তাই নয়, দেখা যায় বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ তামিলনাড়ুর এরোদেতে ভাষণ দিচ্ছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। বিজেপির টুইটার হ্যান্ডেলে সেখানের ভিডিও-সহ কয়েকটি টুইটও করা হয়। যেখানে পুলওয়ামার শহীদ জওয়ানদের উদ্দেশ্যে তিনি টুইট করেন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়।
কম যান না, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও। দেখা যায়, কাশ্মীরের ঘটনাতে কোনও হেলদোল নেই তাঁরও। তিনিও নির্দ্বিধায় নির্বাচনী সভা সারলেন কেরালার পথনমথিত্থায়। টুইট করে সে খবর জানানও সকলকে। এমনকি তাঁর ফেসবুক পেজে সভাস্থল থেকে লাইভও করা হয়। কিন্তু পুলওয়ামার বীর শহীদদের উদ্দেশ্যে তাঁর শোকবার্তা যখন আসে, ঘড়ির কাঁটা তখন আটের ঘরে। অর্থাৎ প্রত্যেকেই আগে নজর রেখেছেন ভোটব্যাঙ্কের দিকে। সেই কাজ মিটতেই তাঁদের মনে পড়েছে শহীদ হওয়া ৪৪ জওয়ানের কথা। যেখানে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢড়া সাংবাদিক সম্মেলনে নীরবতা পালন করে বৃহস্পতিবার রাজনীতিকে দূরে রাখার অনুরোধ করেন, সেখানে ‘দেশপ্রেমী’ বিজেপির শীর্ষ নেতাদের এমন কর্মকান্ড অবাক করেছে দেশবাসীকে।
অন্যদিকে, সেনাকে নিরাপত্তা দিতে যে মোদী সরকার ব্যর্থ, সে অভিযোগ আগেও উঠেছে বহুবার। এমনকি গোয়েন্দাদের তরফে আগাম সতর্কবার্তা থাকা সত্ত্বেও সরকার যে সুরক্ষার ক্ষেত্রে কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি, গতকালের ঘটনাই তার প্রমাণ। খোদ জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যপাল সত্যপাল মালিকও এই অভিযোগ করেছেন। আবার, পরিসংখ্যান বলছে, গত পাঁচ বছরে জঙ্গী হানায় দেশে নিহত সেনার সংখ্যা প্রায় ৯০০, যেখানে এই ৫ বছরে কোনও যুদ্ধই লড়তে হয়নি দেশকে। এমনকি কার্গিলের যুদ্ধেও নিহতের সংখ্যা ছিল ৫২৭। ফলে সেনা মৃত্যুকে যে আমল দিচ্ছেন না মোদী, তা বলাই বাহুল্য।