দিন কয়েক আগেই সত্যাগ্রহর মঞ্চ থেকে কেন্দ্রের সঙ্গে খোলাখুলি যুদ্ধ ঘোষণা করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ জানিয়েছিলেন, ‘আমার সঙ্গে পাঙ্গা নিলে আমি আরও চাঙ্গা হয়ে চাই।’ এবার সেই ‘পাঙ্গা’র সূত্রপাত হল মোদীর ‘আয়ুষ্মান ভারত’ বনাম মমতার ‘স্বাস্থ্যসাথী’র লড়াই দিয়ে।
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ ছিল, স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্প তাঁর সরকারের। অথচ তাঁরই রাজ্যে নরেন্দ্র মোদীর ছবি লাগানো কার্ড বিলিতে নেমেছে কেন্দ্র। তারপরই ‘আয়ুষ্মান ভারত’-স্বাস্থ্যসাথীর মউ থেকে বেরিয়ে আসার কথা ঘোষণা করেন মমতা। একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, আমাদের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প অনেক আগে এসেছে। যা করার আমরাই করেছি। কেন্দ্র কোনও টাকা দেয় না। ভবিষ্যতেও আমরাই করব।
এবার তাঁর দেওয়া সেই কথাই রাখলেন মমতা। শুধু কথা রাখাই নয়, সারা দেশের মধ্যে সম্ভবত তিনিই প্রথম কোনও মুখ্যমন্ত্রী যিনি প্রায় ১ কোটি ৪০ লক্ষ পরিবারের জন্য স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প ছড়িয়ে দিতে চলেছেন। বর্তমানে ৫৫ লক্ষ পরিবার রাজ্যের স্বাস্থ্যসাথীর উপভোক্তা। আরও ৮৫ লক্ষ পরিবারকে এই প্রকল্পে যুক্ত করতে চলেছেন তিনি। এর মধ্যে আরএসবিওয়াই-এর ৬০ লক্ষ উপভোক্তা ছাড়াও বিপিএল নির্ধারণের মাধ্যমে এ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে আরও ২৫ লক্ষ পরিবার।
নরেন্দ্র মোদী সরকারের লক্ষ্য ছিল, বাংলার ১ কোটি ১২ লক্ষ পরিবারকে আয়ুষ্মান ভারত-স্বাস্থ্যসাথীতে অন্তর্ভুক্ত করা। মমতার স্বাস্থ্য দফতর সেই সংখ্যাকে টপকে আরও ২৮ লক্ষ পরিবারের ঘরে পৌঁছে দিতে চলেছে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রের কাছ থেকে এক টাকা না নিয়েও এই বিপুল সংখ্যক মানুষকে স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করার খরচও বহন করতে চলেছে রাজ্য সরকারই। এ সংক্রান্ত নির্দেশনামা প্রকাশ করতে চলেছে সরকার।
দফতর সূত্রে খবর, গত বছর আয়ুষ্মান ভারত-স্বাস্থ্যসাথী মউয়ের সময় কেন্দ্র মমতার স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের নাম বজায় রেখেই স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্প ছড়িয়ে দিতে সহমত হয়। সেকথা জেনে প্রাথমিকভাবে রাজ্যও রাজি হয়। কিন্তু, তারপরই বাংলার ঘরে ঘরে প্রধানমন্ত্রীর ছবি লাগানো কার্ড পৌঁছে দেওয়ার খবর মুখ্যমন্ত্রীর কানে পৌঁছয়। তিনি বুঝে যান, মউকে হাতিয়ার করে ‘স্বাস্থ্যসাথী’র মতো মাস্টারব্লাস্টার প্রকল্পকে নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চলেছে বিজেপি। তারপরই মউ থেকে বেরিয়ে এসে একার দমেই শুধু এই প্রকল্প চালানোই নয়, প্রকল্পটি বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
জানা গেছে, ৫৫ লক্ষ থেকে ১ কোটি ৪০ লক্ষ পরিবারকে উপভোক্তা করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের সরাসরি সুবিধাভোগীর সংখ্যা বেড়ে হবে প্রায় সাড়ে ছ’ কোটি। সেজন্য রাজ্য সরকারের এই খাতে বাড়তি খরচ হবে ৮৫০ কোটি টাকারও বেশি।