গত লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই বিজেপি বিরুদ্ধে ইভিএম কারচুপির অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। এমনকি গত মাসে এক মার্কিন হ্যাকারও জানিয়েছিলেন যে ২০১৪-এর লোকসভায় ইভিএম হ্যাক করেই জিতেছিল বিজেপি। তাই আগামী লোকসভা ভোটে এমন সব অভিযোগ যাতে না ওঠে, তার জন্য ‘ইভিএম ম্যানেজমেন্ট ট্র্যাকিং সিস্টেম’ চালু করতে চলেছে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন। এর ফলে যে কোনও ইভিএম সংরক্ষণ কেন্দ্র বা ওয়্যারহাউস থেকে বেরিয়ে কোন বুথে গেল, বা বুথ থেকে বেরিয়ে গণনা কেন্দ্রে পৌঁছল কি না, তা ট্র্যাকিং সিস্টেমে দেখা যাবে।
জানা গেছে, এজন্য প্রতি ইভিএমে একটি করে আলাদা নম্বর থাকবে। কম্পিউটারের সাহায্যে, অনলাইনে সেই নম্বরের মাধ্যমে ইভিএমটিকে ট্র্যাকিং করতে পারবেন নির্বাচন কমিশনের কর্তারা। ভোটে ব্যবহৃত সব ইভিএম এভাবে ট্র্যাক করা সম্ভব হবে। কমিশনের নজরের বাইরে কোন ইভিএম যেতে পারবে না। যেমন, বাংলার জন্য বরাদ্দ ইভিএমগুলো শুধু কলকাতার মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের দফতর থেকে নয়, দিল্লীতে বসেই ট্র্যাক করতে পারবেন নির্বাচন কমিশনের কর্তাব্যক্তিরা।
আগামী লোকসভা ভোটে আইটি অ্যাপ্লিকেশন-এর ওপরে গত সপ্তাহে দু’দিন ধরে দিল্লীতে বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে কয়েকটি রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক এবং নির্বাচন কমিশনের অফিসাররা উপস্থিত ছিলেন। বাংলা থেকে মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক আরিজ আফতাব, অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক অমিত রায় চৌধুরী, ডেপুটি সিইও অঞ্জন ঘােষ উপস্থিত ছিলেন। দু’দিন ধরে চলা প্রশিক্ষণে পর্বে এবারের ভোটে যেসব আইটি অ্যাপ্লিকেশন বা তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ বা অ্যাপ থাকবে, তা তুলে ধরা হয় এবং রাজ্যে তা চালু করতে বলা হয়।
এবার চালু হচ্ছে নিউ জেনেসিস অ্যাপ। যে অ্যাপের মাধ্যমে ভোটের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া থেকে গণনা পর্যন্ত সব কিছু দেখতে পারবেন নির্বাচন কমিশনের কর্তাব্যক্তিরা। কোনও প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার বিস্তারিত তথ্য, হলফনামা- সব কিছুই ওই অ্যাপে ডাউনলােড হয়ে যাবে। ফলে নির্বাচন কমিশনের কর্তারা নিউ জেনেসিস অ্যাপের মাধ্যমে সব প্রার্থী সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন। এছাড়া বুথ ও গণনা কেন্দ্র থেকে সব তথ্যই ওই অ্যাপে আপলোড করতে হবে ভোটকর্মীদের। এমনকি ওই অ্যাপের মাধ্যমে সভা, মিছিলের অনুমতি চাইতে পারবেন প্রার্থীরা।
এর পাশাপাশি চালু হচ্ছে সি-ভিজিল অ্যাপ। যে কোনও সিটিজেন বা নাগরিক ওই অ্যাপের মাধ্যমে তাঁর এলাকায় ঘটে যাওয়া ঘটনার ভিডিও আপলোড করতে পারবেন। ১০০ মিনিটের মধ্যে অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে হবে। কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানাতে হবে দিল্লীতেও। গত কর্ণাটক বিধানসভা ভোটে এই অ্যাপটি প্রথম চালু হয়। তা খুবই কার্যকর হয়। এবার গোটা লোকসভা কেন্দ্রে তা চালু হতে চলেছে। এই সি-ভিজিল অ্যাপের মাধ্যমে যে কোনও নাগরিক অভিযােগও জানাতে পারবেন। এছাড়াও ভােটারদের সুবিধার্থে সুবিধা, সুগম ও সমাধান নামে তিনটি অ্যাপ চালু থাকছে। এগুলি গত বিধানসভা ভােটেও ছিল।