এতদিন বলতেন ‘চৌকিদার চোর’। এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সরাসরি ‘আম্বানিদের দালাল’ বললেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। গোপনে রাফাল চুক্তির আগাম খবর অনিল আম্বানিকে জানিয়ে দিয়ে তাঁর দালাল হিসেবে কাজ করেছিলেন মোদী! মঙ্গলবার রাফাল চুক্তি নিয়ে এই মন্তব্য করে রাহুল বলেন, সরকারি গোপনীয়তা ভঙ্গ করে দেশদ্রোহিতা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর দাবি, চুক্তির দশ দিন আগেই মোদীর কাছ থেকে সব জেনে গেছিলেন আম্বানি।
ফ্রান্সের এয়ারবাস কোম্পানির এক আধিকারিকের ২০১৫ সালের ১৮ মার্চের এক ই-মেলকে ‘অস্ত্র’ করে কংগ্রেস সভাপতি মঙ্গলবার সকালে এআইসিসি দফতরে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। তিনি বলেন, ২০১৫ সালের এপ্রিলের ৯-১০ তারিখে ফ্রান্স সফর করেন প্রধানমন্ত্রী। তখনই ফ্রান্স সরকারের সঙ্গে ৩৬টি রাফাল বিমান কেনার চুক্তির কথা ঘোষণা করা হয়। তার আগে ফ্রান্সে যান আম্বানি। পরে আম্বানি ‘রিলায়েন্স ডিফেন্স’ কোম্পানি গঠন করেন।
রাহুলের দাবি, আম্বানি ফ্রান্সের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জঁ-ইভস লে দ্রিয়ানের প্যারিসের দফতরে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। মউ চুক্তিতে কী শর্ত থাকবে, তা ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানার আগে আম্বানিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। রাহুলের বক্তব্য, ফ্রান্সের দাসো কোম্পানির সঙ্গে ভারত সরকার যে চুক্তি করতে চলেছে, সেটা প্রধানমন্ত্রী ছাড়া অন্য কারও জানার কথা নয়। তা হলে অনিল আম্বানি জানলেন কীভাবে?
তাঁর কথায়, ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিছু জানার আগেই মোদী নিজে আম্বানিদের জানিয়ে দিয়েছেন। গোপনীয়তা রক্ষার শপথ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী গোপন তথ্য ফাঁস করেছেন। জাতীয় সুরক্ষা নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন।’ এরপর রাহুল বলেন, ‘আম্বানির দালালি করে দেশদ্রোহিতা করেছেন মোদী। সাধারণত গুপ্তচররা এমন আচরণ করে। এর জবাব দিতে হবে প্রধানমন্ত্রীকে।’
ওই সাংবাদিক বৈঠকের পরই বিজেপির তরফে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ তড়িঘড়ি বলেন, ‘রাহুল গান্ধী একটি বেসরকারি সংস্থার ই-মেল কীভাবে পেলেন তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। লজ্জাজনকভাবে অন্য সংস্থার লবিস্ট হিসেবে যে সব কাজ রাহুল করে চলেছেন, তারপরেও দেশের মানুষের মনোভাব বদলাবে না। দেশের যুদ্ধবিমান ও ভাল সামরিক সরঞ্জাম প্রয়োজন।’ অন্যদিকে, রিলায়েন্স ডিফেন্সের সাফাই, অনিল আম্বানির ওই সফর রাফাল সংক্রান্ত ছিল না। মউ চুক্তির উল্লেখ করা হয়েছিল ফ্রান্সের এয়ারবাস হেলিকপ্টার্সের সঙ্গে রিলায়েন্স ডিফেন্সের সহযোগিতার বিষয়ে। সরকারি চুক্তির সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই।
উল্লেখ্য, আম্বানির জঁ–ইভস লে দ্রিয়ানের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় সেখানে ছিলেন সেদেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর উপদেষ্টা জঁ ক্লঁ মলেত ও তাঁর উপদেষ্টারা। উল্লেখিত ই-মেলে বলা আছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় একটি মউ স্বাক্ষরিত হবে বলে অনিল আম্বানি ফ্রান্সের প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে জানিয়েছেন। আবার রাফাল নিয়ে সিএজির রিপোর্ট তাঁদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় বলে সাফ জানিয়ে দিয়ে রাহুল বলেন, ‘সিএজি হল চৌকিদার অডিটর জেনারেল রিপোর্ট। এটি চৌকিদারের লেখা, চৌকিদারের অডিট করা।’